গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে করোনা প্রতিষেধক হাতে চলে আসবে বলে আশা জাগিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু সংক্রমণে লাগাম পরানো যাচ্ছে না কিছুতেই। শুক্রবার পর্যন্ত দেশে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৯০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকোপে ১ লক্ষ ৩২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে দেশে দৈনিক সংক্রমণ ২৯ হাজারে নেমে এসেছিল। কিন্তু গত দু’দিন ধরে ফের তা ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৪৫ হাজার ৮৮২ জন নোভেল করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তাতেই মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ৯০ লক্ষ ৪ হাজার ৩৬৫ হয়েছে।
এ দিন সব মিলিয়ে ৫৮৪ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে মহারাষ্ট্রেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী দিল্লিতে ৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশ যথাক্রমে ৫৩ ও ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কর্নাটক, কেরল এবং ছত্তীসগঢ়ে ২৬ জন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। করোনার প্রকোপে সব মিলিয়ে দেশে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩২ হাজার ১৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
প্রতি দিন যত সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে সংক্রমণের হার ৪.২৪ শতাংশ। এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৯৪।
সংক্রমিতের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, একই ভাবে প্রতি দিন বহু রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন দেশে। তবে গত দু’দিনের তুলনায় এ দিন দৈনিক সুস্থতা খানিকটা কম। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ হাজার ৮০৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মোট আক্রান্তের মধ্যে ৮৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৪০৯ জন রোগী এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন দেশে।
সংক্রমণ এবং মৃত্যুর নিরিখে এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রই দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৫। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৭১ জন রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনার প্রকোপে এখনও পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৩৫৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে।
আরও পড়ুন: প্রবীণদের শরীরে দারুণ কার্যকর অক্সফোর্ডের টিকা, দাবি ট্রায়ালে
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কর্নাটক। সেখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৮০। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৮৮ জন রোগী। সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৬০৪। তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭১১, যার মধ্যে ৮ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮০১ জন রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনার প্রকোপে সেখানে মোট ৬ হাজার ৯১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯৮৯। পঞ্চম স্থানে থাকা কেরলে এখনও পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৪১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। ষষ্ঠ স্থানে থাকা উত্তরপ্রদেশে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৫ লক্ষ ১৯ হাজার ১৪৮।
পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রাজধানী দিল্লিতে নতুন করে বিধিনিষেধ চালু করেছে অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৬৩০ হয়েছে। তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে দিল্লি। অষ্টম স্থানে থাকা পশ্চিমবঙ্গে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫০৫। তালিকায় নবম ও দশম স্থানে যথাক্রমে ওড়িশা (৩ লক্ষ ১১ হাজার ৭৮৮) এবং তেলঙ্গানা (২ লক্ষ ৬১ হাজার ৭২৮)রয়েছে।
সংক্রমণের নিরিখে বিশ্ব তালিকায় এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ১৭ লক্ষ ১৫ হাজার ১৬৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৬৭। তবে মৃত্যুর নিরিখে ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে ব্রাজিল। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত করোনার বলি হয়েছেন ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৪ জন রোগী। ব্রাজিলে মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৬১। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
আরও পড়ুন: জগদ্ধাত্রী পুজোয় সাধারণের প্রবেশ বন্ধ সারদাপীঠে
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)