দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল দেশের বেশ কিছু রাজ্য। করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতির জন্যই এ রকম পরিস্থিতি বলে এক রকম স্বীকার করে নিলেন দিল্লি এমসের প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া। গত বছর বড়দিনের সময় নতুন প্রজাতির জেরে ব্রিটেনে যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে ভারতের এখনকার পরিস্থিতির মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। গুলেরিয়া বলেছেন, ‘‘আক্রান্ত যখন হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়, তখন বুঝতে হবে কিছু নিশ্চয় ঘটেছে, যা ভাইরাসকে আরও বেশি সংক্রামক করেছে।’’ যদিও করোনার নতুন প্রজাতির জেরেই এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যানেও ফুটে উঠছে সেই আশঙ্কার কথা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ হাজার ৩৩০ জন। যা এ বছরে এখনও অবধি সর্বোচ্চ। ২০২০-র ১১ অক্টোবরের পর থেকে এক দিনে এত সংখ্যক সংক্রমণ হয়নি। এ নিয়ে দেশে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ২২ লক্ষ ২১ হাজার ৬৬৫ জন। এই সংক্রণমণের অধিকাংশটাই ৯-১০টি রাজ্য থেকে। তার মধ্যে মহারাষ্ট্রের অবস্থা সবথেকে করুণ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৪৪ জন। কর্নাটক এবং ছত্তীসগঢ়েও অবস্থা গত ক’দিনে খারাপ হয়েছে। এই দুই রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ৪ হাজারের বেশি। কেরল, তামিলনাড়ু, পঞ্জাবে তা আড়াই হাজারের বেশি। মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতে তা দু’হাজের বেশি। গত ক’দিনে দিল্লির পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮১৯। ২১ ডিসেম্বরের পর এটাই দিল্লির সর্বোচ্চ একদিনে আক্রান্ত। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও দৈনিক আক্রান্তের এক হাজারের বেশি। পশ্চিমবঙ্গ এবং রাজস্থানেও তা ৯০০ ছাড়িয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে দেশে দৈনিক মৃত্যু কমে হয়েছিল ১০০-র আশপাশে। দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর দৈনিক মৃত্যুও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে মারা গিয়েছেন ২২৭ জন। দিল্লি, তামিলনাড়ু, কর্নাটকেও বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। করোনার জেরে এখনও অবধি প্রাণ কেড়েছে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৯২৭ জনের। দৈনিক সংক্রমণের এই বৃদ্ধি দেশের সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা রোজ বাড়াচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সক্রিয় রোগী বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার। এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫৫ জন।
সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে জোরকদমে চলছে দেশের টিকাকরণ প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই দেশে ৬ কোটি ৫১ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৯৬ টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ২০ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৪৩ জন। বৃহস্পতিবার থেকে ৪৫ বছরের বেশি বয়সের সকলে টিকা নিতে পারবেন।