দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
ক্রমেই বাড়ছে দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় তা ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু মহারাষ্ট্রেই আক্রান্ত ১৪ হাজারের বেশি। পশ্চিমের এই রাজ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অব্যাহত। ইতিমধ্যেই নাগপুরে আগামী সোমবার থেকে পূর্ণ লকডাউন জারি হতে চলেছে। অন্য কয়েকটি জেলাতে জারি হয়েছে আংশিক লকডাউনের বিধি নিষেধ। করোনা পরিস্থিতি বেগতিক হলে একাধিক জায়গায় ফের পূর্ণ লকডাউন জারি হতে পারে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। একই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও। সাধারণ মানুষকে ‘সতর্ক’ এবং ‘জাগ্রত’ থাকার বার্তা দিয়ে কেন্দ্রের সতর্কবার্তা ‘অতিমারি এখনও শেষ হয়নি’।
বিষয়টি নিয়ে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভিকে পাল একটি সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন। সেই বৈঠকেই উঠে এসেছে করোনা সংক্রমণ রোধে বিধি নিষেধ মেনে চলার কথা। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা এখন যে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি, তাতে কোভিডের ছড়িয়ে পড়া রুখতে কড়াকড়ি ফিরিয়ে আনার ফের প্রয়োজন পড়ছে। এই ভাইরাসকে হাল্কা করে দেখবেন না। অপ্রত্যাশিতভাবে তা আঘাত হানতে পারে।’’ দেশের যে সব এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে সেই এলাকার মানুষদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘ভাইরাস থেকে যদি আমরা মুক্ত হতে চাই, তাহলে কোভিড রোধে যথাযথ অভ্যাস বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা, কন্টেনমেন্ট কৌশলের পাশাপাশি টিকাকরণেও গুরুত্ব দিতে হবে করোনা ভাইরাস আটকাতে।’’
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে এখনও অবধি আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৮ হাজার ৮৪৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৩ হাজার ২৮৫ জন। দেশে কোভিডের জেরে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১১৭ জন। দেশে এখনও অবধি মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৩০৬ জনের। দেশে মৃত্যুর হার ১.৪ শতাংশ।
দেশের মধ্যে সবথেকে বেলাগাম অবস্থা মহারাষ্ট্রের। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৩১৭ জন। মহারাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ২০ হাজার থেকে কমতে কমতে দু’আড়াই হাজারে নেমেছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। এবং বাড়তে বাড়তে তা একদিনে ১৪ হাজার ছাড়াল। মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ বৃদ্ধির এই প্রবণতা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছে কেন্দ্র। সংক্রমণ কমে যেতেই গা-ছাড়া মনোভাবকেও দায়ী করেছে আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর জেনেরাল বলরাম ভার্গব। তিনি বলেছেন, ‘‘পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া, কোভিড রোগীদের উপর নজর তুলে দেওয়ার পরিণতি হচ্ছে মহারাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা।’’ এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি নয়, দায়ী কোভিড আটকাতে অনুপযুক্ত ব্যবস্থা।’’ মহারাষ্ট্র ছাড়াও পঞ্জাব, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, ছত্তীসগঢ়ের দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি বাড়াচ্ছে চিন্তা। দিল্লিতেও গত এক সপ্তাহে বেড়েছে সংক্রমণ। দেশে টিকাকরণও চলছে পুরোদমে। কিন্তু টিকাকরণ শুরু হলও সংক্রমণ রুখতে দৈনন্দিক জীবনে সাবধানতার উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।