করোনাভাইরাসের জেরে দেশব্যাপী যে ভাবে লকডাউন চলছে, তাতে বিপুল পরিমাণে ব্যাবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকেরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মাঠে সবজি পড়ে থাকলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না।
ফলে কখনও রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন ফসল, তো কখনও মাঠেই পড়ে থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে সেগুলো। এ রকম অবস্থায় চাষিরা যাতে তাঁদের ফসল বিক্রি করতে পারেন, তার জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকেই নানা পরিকল্পনা আসছে।
কোনও রকম দালাল ছাড়া কী ভাবে ফসল সরাসরি মাঠ থেকে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছনো যায় এবং চাষিরাও ন্যায্য দাম পান, তার একাধিক পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। কখনও সাতারা, কখনও বেঙ্গালুরু থেকে আবার কখনও টুইটারে এই সব অভিনব পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে। সেগুলোর মধ্যে থেকে চারটি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা হল।
হার্ভেস্টিং ফার্মার নেটওয়ার্ক: উদ্যোগী রুচিত গর্গ শুধুমাত্র চাষিদের কথা ভেবেই একটি অ্যাপ বানিয়ে ফেলেছেন। নাম দিয়েছেন হার্ভেস্টিং ফার্মার নেটওয়ার্ক।
লকডাউনে চন্ডীগড়ে আটকে পড়েছিলেন রুচিত। তাজা সব্জি তিনি পাচ্ছিলেন না। অথচ প্রচুর পরিমাণে সব্জি নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পাচ্ছিলেন শুধু। তখনই এই অভিনব পরিকল্পনা তাঁর মাথায় আসে।
চাষিদের জন্য হার্ভেস্টিং ফার্মার নেটওয়ার্ক অ্যাপ বানিয়ে ফেলেন। ২২টা রাজ্যে মোট ১০ লক্ষ চাষির কাছে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন এই অ্যাপের মাধ্যমে। কার কাছে কী কী সব্জি, কত পরিমাণে রয়েছে সবই এই অ্যাপে রোজ আপডেট হয় ছবি সহ।
আর ক্রেতারা সরাসরি এই অ্যাপ নিজেদের ফোনে ইনস্টল করেই জেনে নিতে পারেন, তাঁর আশপাশে কোন চাষির কাছে কী কী সব্জি কত পরিমাণে রয়েছে। সেই মতো সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে বা এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ বা টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে অর্ডারও দিতে পারবেন।
প্রথমেই অবশ্য সরাসরি অ্যাপ বানিয়ে ফেলেননি তিনি। ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, তা জানতে প্রথমে টুইটারে এটি পোস্ট করেছিলেন। পোস্টে খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন। তবে শর্ত একটাই, একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণ অর্ডার দিতে হবে। তা না হলে চাষিদের সব্জি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যটা সফল হবে না।
সাতারার মাঠ থেকে সরাসরি বাড়ি-মডেল: মহারাষ্ট্রের সাতারার এই মডেল চাষিদের জন্য খুবই উপয়োগী হয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত দন্ত চিকিত্সক অবিনাশ পল প্রথম এই মডেলের কথা বলেন। এলাকার চাষি, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এই মডেল বাস্তবায়িত করেছেন তিনি।
এর ফলে সাতারার ৪০টি ওয়ার্ডের দরজায় দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে তাজা সব্জি। সরাসরি জমি থেকেই সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার জন্য বাসিন্দাদের বাজারে গিয়ে ভিড় বাড়াতে হচ্ছে না, তেমনই চাষিদেরও বিক্রি করতে বাইরে বার হতে হচ্ছে না। বাড়ি বসেই তাঁরা ফসলের দাম পাচ্ছেন।
এর জন্য মোট ১০০টি গাড়িকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাতে করেই দরজায় দরজায় সব্জি পৌঁছে যাচ্ছে। কোন ওয়ার্ডের লোকেরা কোন কোন চাষির কাছে ফোন করে অর্ডার দেবেন, তারও একটা তালিকা প্রকাশ করেছে প্রশাসন।
বেঙ্গালুরুর আঙুর চাষি এবং ইউএএস অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন: বেঙ্গালুরুর আঙুর চাষিদের জন্য ত্রাতা হয়ে উঠেছে ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার সায়েন্সেস (ইউএএস) অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন। শহরের সমস্ত আঙুর চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফসল নষ্টের হাত থেকে বাঁচানোর একটি উপায় বার করেছে তারা। সরাসরি ক্রেতাদের কাছে আঙুর পৌঁছে দেওয়ার উপায়।
ডেকান ক্রনিক্যালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টন আঙুর বিক্রি করা যাচ্ছে। চাষিরা দামও পাচ্ছেন ঠিকঠাক।
স্পুডনিক ফার্ম: শুধু লকডাউনেই নয়, গত এক বছর ধরে চাষিদের জমি থেকে অর্গানিক ফসল সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে চলেছে এই ফার্ম। যার প্রতিষ্ঠাতা সুমিত কৌর।
বেঙ্গালুরু রুরাল, মাল্লুর, চিন্তামনি এবং চিক্কাবল্লাপুরের চাষিদের কাছ থেকেই সম্পূর্ণ অর্গানিক ফসল সংগ্রহ করে থাকে। তারপর ফোন, এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ মারফত যেমন যেমন অর্ডার পান, ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন তিনি।