ছবি এপি।
কেন্দ্র ও রাজ্য— কোনও সরকারই পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে ট্রেন বা বাসের ভাড়া আদায় করতে পারবে না বলে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য ট্রেন চাওয়ার পরে কোনও বিলম্ব না করে রেল মন্ত্রককে ট্রেনের বন্দোবস্ত করতে হবে বলেও শীর্ষ আদালত জানিয়েছে।
কোন রাজ্য থেকে কত জন শ্রমিক নিজের গ্রামে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁদের নাম নথিভুক্তিকরণ ও পৌঁছে দেওয়ার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে আজ সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও সমস্ত রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। শ্রমিকদের ট্রেনের ভাড়া কে মেটাবে, তা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ হয়েছে। তা ছাড়া অন্য সমস্যাও রয়েছে। এক রাজ্য ট্রেনে করে শ্রমিকদের তাদের রাজ্যে রওনা করতে চাইলেও শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্য সব ট্রেন ঢুকতে দিতে না চাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। আজ সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‘এক জন শ্রমিক ফিরতে চেয়ে নাম লেখালে একটা নিশ্চয়তা থাকা দরকার যে, সাত বা দশ দিনে তাঁকে ফেরানো হবে। সেই সময়টা কত? এমন উদাহরণও রয়েছে, যেখানে এক রাজ্য শ্রমিকদের ফেরত পাঠিয়েছে, কিন্তু ওই শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্যের সীমানায় আটকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্পষ্ট নীতি দরকার।’’ ট্রেনের ভাড়া প্রসঙ্গে বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমাদের দেশে দালালরা থাকবেই। কিন্তু শ্রমিকদের ভাড়া মেটানোয় দালালদের হস্তক্ষেপ আমরা চাই না। কে ভাড়া মেটাবে, তা নিয়ে স্পষ্ট নীতি দরকার।’’ কেন্দ্রের অবস্থান ছিল, ট্রেনের খরচের ৮৫ শতাংশ রেল বহন করছে। বাকি ১৫ শতাংশ রাজ্য বহন করুক। ৫ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
করোনা মোকাবিলায় লকডাউন জারি হওয়ায় সবচেয়ে সমস্যায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা। অনেকেই হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথে খাবার বা জলের অভাবে, ক্লান্তিতে, পণ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। মে মাসের প্রথমে পরিযায়ীদের ফেরানোর জন্য ট্রেন চালু হলেও সমস্যা মেটেনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে অনেক সমাজকর্মী মামলা করলেও সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কাজে নাক গলাতে চায়নি। সুপ্রিম কোর্ট চোখ বুজে রয়েছে বলে বিচারপতিদের সমালোচনা করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুষ্মন্ত দাভে। আজ কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল এই মামলাকারীদের ‘হতাশার প্রচারক’ ও ‘আরামকেদারায় বসে থাকা বুদ্ধিজীবী’ বলেন। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় অবশ্য বলেছিলেন, অতিমারির সময় সরকারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা আদালতেরই দায়িত্ব। এর পরেই প্রবীণ আইনজীবীদের চিঠির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আজ বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তি, বাড়ি পৌঁছনোর বন্দোবস্ত, খাদ্য, আশ্রয়ের বন্দোবস্তে যথেষ্ট খামতি রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বাড়ি ফিরতে চেয়ে নাম লিখিয়েও সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিরাট সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিক এখনও হাঁটছেন।’’
আরও পড়ুন: আরও হাসপাতাল তৈরি রাখুন, রাজ্যগুলিকে বললেন রাজীব গৌবা
আরও পড়ুন: লকডাউন নিয়ে মত জানতে অমিত শাহের ফোন মুখ্যমন্ত্রীদের