ছবি: পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী সংসদে বলেছিলেন, একশো দিনের কাজ প্রকল্প বা মনরেগা হল কংগ্রেসের ব্যর্থতার জলজ্যান্ত স্মারক। তাই এই প্রকল্প তিনি কোনও দিনই বন্ধ করবেন না। সনিয়া গাঁধীকে বিদ্রুপ করে মোদী বলেছিলেন, “স্বাধীনতার ৬০ বছর পরেও যে আপনারা মানুষকে গর্ত খুঁড়তে পাঠিয়েছিলেন, এ হল তার প্রমাণ।”
লকডাউনের জেরে রুটিরুজি হারিয়ে গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের বন্দোবস্ত করতে মোদী সরকার আজ সেই গর্ত খোঁড়ার প্রকল্পেই বাড়তি ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করল। চলতি বছরের বাজেটে মনরেগা-য় আগেই ৬১,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা ছিল। তা বেড়ে ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে গেল। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, “গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকরা রোজগার পাবেন। অতিরিক্ত ৩০০ কোটি কর্মদিবস তৈরি হবে।”
অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস স্বাস্থ্য-শিক্ষার পাশাপাশি মনরেগা-য় গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মোদী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আর আনন্দ শর্মা থেকে আহমেদ পটেলের মতো কংগ্রেস নেতারা প্রধানমন্ত্রী মোদীর পুরনো মন্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, আশা করা যায়, এ বার প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা ইউপিএ-সরকারের প্রকল্প নিয়ে বিদ্রুপ করা বন্ধ করবেন। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মনরেগা-র পাশাপাশি করোনা-সঙ্কটের সময় মোদী সরকার গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতেও নগদ হস্তান্তর বা ডিবিটি-র মতো ইউপিএ-সরকারের প্রকল্পেই ভরসা রাখছে। অথচ মনমোহন-জমানায় বিজেপি এর বিরোধিতা করেছিল।
আরও পড়ুন: অনলাইন শিক্ষায় নয়া প্রকল্প নির্মলার
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বৃদ্ধি কত, নীরব নির্মলা
প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের পরেও শহর থেকে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরা শ্রমিকদের জন্য মনরেগা-ই হয়ে উঠেছিল জিয়নকাঠি। এ বার লকডাউন ওঠার পরেও আগামী কয়েক মাস যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা গ্রামে ফিরে কাজ পান, তার জন্য অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বর্ষার সময়েও মনরেগা-র কাজ হবে। সাধারণত চাষের কাজে যাতে খেতমজুরের অভাব না হয়, তার জন্য বর্ষার সময় মনরেগার কাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেও এ বছর কাজের চাহিদা মেটানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বাজেট বরাদ্দের ৬১,৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা গত বছরের বকেয়া মেটাতেই চলে যাবে। অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষিকা দীপা সিনহার মতে, “মনরেগা-য় ন্যূনতম কাজের গ্যারান্টি ১০০ দিন থেকে বাড়ানোর কোনও উল্লেখ নেই। সরকার বাড়তি ৩০০ কোটি কর্মদিবসের কথা বললেও তাতে পরিবার পিছু ২৫ দিনও কাজ মিলবে না। কারণ ১৪ কোটি মানুষের জব-কার্ড রয়েছে।”
পঞ্চম দিনের ঘোষণা
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একশো দিনের কাজ
• গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের বন্দোবস্ত করতে একশো দিনের কাজের প্রকল্প বা এমজিএনআরজিইএ-তে বাড়তি ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ
• তৈরি হবে ৩০০ কোটি কর্মদিবস, বর্ষার মরসুমেও কাজ হবে
রাজ্যকে সাহায্য
• চলতি অর্থ বছরে রাজ্য সরকারগুলিকে ঋণের মাত্রা রাজ্যের জিডিপি-র ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার ছাড়পত্র
• রাজ্যগুলি বাজার থেকে মোট ৪.২৮ লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি ধার করতে পারবে
• এর মধ্যে ০.৫ শতাংশ বা ১.০৭ লক্ষ কোটি টাকা ধার করা যাবে বিনা শর্তে
• এক দেশ-এক রেশন কার্ড, ব্যবসার সহজ পরিবেশ, বিদ্যুৎ বন্টন ও পুরসভাগুলির আয় বাড়ানো—এই চারটি ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজ হলে প্রতি ক্ষেত্রে ০.২৫ শতাংশ করে ১ শতাংশ বাড়তি ঋণের অনুমতি
• চারটি সংস্কারের মধ্যে অন্তত তিনটি সংস্কার করলে আরও ০.৫ শতাংশ ঋণের অনুমতি
আজ ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর আগে থেকেই অবশ্য মনরেগা গ্রামে ফেরা মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছে। সরকারি হিসেবই বলছে, গত বছরের মে মাসের তুলনায় এ বছর মে মাসে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তি মানুষ মনরেগা-য় নাম লিখিয়েছেন। ২.৩৩ কোটি মানুষকে কাজ দিতে হয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে। দীপা বলেন, “গত বছরের তুলনায় কাজের চাহিদা বাড়বে। শহরের গরিবদের জন্য অবশ্য কোনও সুরাহাই নেই।”