দেশের ১৪টি পুরসভা ও ১০টি শহরে সংক্রমণের হার জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি থাকায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। ছবি: এপি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক যত এগিয়ে আসছে, লকডাউন নিয়ে নতুন জল্পনা ছড়াচ্ছে দেশ জুড়ে। যদিও কেন্দ্রের দাবি, নতুন লকডাউনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। খুব বেশি হলে সংক্রমিত এলাকায় কড়া হাতে নিয়ম পালনে জোর দেওয়া হবে। শহর বা রাজ্য অচল করার প্রশ্ন নেই।
গতকাল এক বাংলা টিভি চ্যানেল ১৮ জুন থেকে লকডাউন নতুন করে জারি করা হবে বলে দাবি করার পরে আজ প্রেস ইনফরমেশন বুরো সেই তথ্য ভুয়ো বলে জানিয়ে দেয়। একই ভাবে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে এক মাসের লকডাউন করা হবে বলে জল্পনাও খারিজ করেছে কেন্দ্র। সরকারের বক্তব্য, অর্থনীতিকে সচল করতে সদ্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছে। এখন নতুন করে গোটা দেশ লকডাউন করা কোনও ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
নতুন করে লকডাউন-জল্পনার পিছনে রয়েছে মঙ্গল ও বুধবারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হতে চলা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক। আনলক-১ পর্বে করোনা ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছে। এরই মধ্যে আগামিকাল সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকের বিষয় দিল্লির করোনা পরিস্থিতি হলেও, জোর জল্পনা চলছে যে, দেশে লকডাউন জারি করা নিয়েও আলোচনা হতে পারে সেখানে। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিজে স্পষ্ট জানিয়েছে, কালকের বৈঠকের বিষয় হল একমাত্র দিল্লিই।
আরও পড়ুন: করোনা থামবে কোথায় গিয়ে, বলার মতো তথ্য আছে?
অর্থনীতিবিদদের মতে সদ্য অর্থনীতির চাকায় গতি আনতে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। ছোট শিল্পের জন্য ঋণের ঘোষণা ও বণ্টন শুরু হয়েছে। দফতর খুলেছে, খুলেছে দোকান-শপিং মল। অল্প হলেও শুরু হয়েছে কেনা-বেচা। কিছু শিল্পগোষ্ঠী শ্রমিকদের গাড়িভাড়া দিয়ে বাড়ি থেকে কাজের জায়গায় ফেরার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এখন নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা হলে অর্থনীতির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারি সূত্রের মতে, গোটা দেশে নতুন করে লকডাউনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেবল সংক্রমণস্থলগুলির জন্য প্রয়োজনে কড়া নিয়মবিধি জারি করা হবে। সরকারের বক্তব্য, ‘‘লকডাউনের পরিকল্পনা আমাদের বিবেচনায় নেই।’’
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি-রুট ধরে করোনা, নজরে উঃ ২৪ পরগনা
এটা ঠিক যে, স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ সংক্রমণ রুখতে কড়া লকডাউনই একমাত্র উপায় বলে নীতিগত ভাবে মনে করেন। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মাথাব্যথা হল, নতুন এলাকায় সংক্রমণ। এমনিতেই দেশের ১৪টি পুরসভা ও ১০টি শহরে সংক্রমণের হার জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি থাকায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। যার মধ্যে চার মেট্রো শহর ছাড়াও রয়েছে পুণে, আমদাবাদ, হায়দরাবাদের মতো বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর। তারই মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলেছে ছোট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে সংক্রমণের বিস্তার। যেমন লাদাখ। গত দু’দিনে ১৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন ওই এলাকায়। যে সিকিমে ২৪ মে প্রথম সংক্রমণের ঘটনা জানা যায়, সেখানে গত সপ্তাহে এক ধাক্কায় বেড়েছে ৫০ জন রোগী। গত এক দিনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে হরিয়ানা (৪১৫ জন), গোয়ায় (৬০ জন)। এক সময়ে গোটা উত্তর-পূর্ব সংক্রমণ-মুক্ত ছিল। সেখানে গত এক দিনে ত্রিপুরা (১২১ জন), মণিপুর (৬৪), ও অসমে (২২০ জন) করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় হারকে টপকে আয়তনে বড় রাজ্যগুলির সংক্রমণের হারের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ছোট রাজ্যগুলি।
কিন্তু লকডাউন যে ফের জারি হবে না, তা কার্যত স্পষ্ট করে কেন্দ্রের ব্যাখ্যা, দেশে লকডাউনের কোনও প্রশ্নই নেই। যে শহরগুলিতে সংক্রমণের হার খুব বেশি, সেখানে এলাকা চিহ্নিত করে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। রাজ্য তো দূর, গোটা শহরও লকডাউন করার ভাবনা নেই কেন্দ্রের।