লকডাউনের ফলে রোজগার বন্ধ হকার, ঠেলাওয়ালাদের।—ছবি পিটিআই।
লকডাউনের ফলে হকার, ঠেলাওয়ালাদের রোজগার বন্ধ। দাবি উঠেছিল, সরকার এঁদের হাতে কিছু নগদ টাকা তুলে দিক। কিন্তু আজ মোদী সরকার ঘোষণা করল, তাঁদের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের ৫০ লক্ষ হকার, ঠেলাওয়ালা মাথা পিছু ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্কঋণ পাবেন। এক মাসের মধ্যে এই প্রকল্প চালু হবে। কিন্তু প্রশ্ন, হকার, ঠেলাওয়ালাদের কত জন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন? তার কোনও হিসেব সরকারের কাছেও নেই। ব্যাঙ্ক বিষয়ক সচিব দেবাশিস পণ্ডার উত্তর, “নগরোন্নয়ন মন্ত্রক খতিয়ে দেখছে, আগে কত জন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কেউ আগে না-নিলেও তাঁকে ব্যাঙ্ক ঋণ দেবে।’’
আজ অর্থমন্ত্রী শ্রমিক ও চাষিদের সুরাহা দিতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন। যার পরিমাণ প্রায় ৩.১৬ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারের ঘর থেকে খরচ হবে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, রাজকোষ ঘাটতি বাড়িয়ে সরকারি খরচ বাড়াতে নারাজ কেন্দ্র। রাজকোষ ঘাটতি বেড়ে গেলে মূল্যায়ন সংস্থাগুলি রেটিং কমাবে বলে সরকার ভয় পাচ্ছে। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন তা মেনে নিয়েই জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ এমন ভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, মোদী জিডিপি-র ১০% যে প্যাকেজ দেওয়ার কথা বলেছেন তার খুব সামান্যই রাজকোষ থেকে যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে নগদের জোগান বাড়িয়ে ও ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ঋণ দিয়ে হিসেব মেলানো হবে।
পরিযায়ী শ্রমিক
• রাজ্য, এনজিও-চালিত ত্রাণ শিবিরে থাকা ৮ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য মে ও জুন মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল বা গম, পরিবারপিছু এক কেজি ছোলা
• যাঁদের রেশন কার্ড নেই বা খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় নন, শুধু তাঁদের জন্য
• ভবিষ্যতে ভিন্ রাজ্যে গেলেও যাতে রেশন মেলে, তাই ২০২১-এর মার্চের মধ্যে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’
• অগস্টের মধ্যে ২৩টি রাজ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় আসবেন ৬৩ কোটি
• পরিযায়ী শ্রমিক ও শহরের গরিবদের জন্য সাধ্যের মধ্যে ভাড়াবাড়ির প্রকল্প। সরকারি, বেসরকারি বা যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে আবাসন
ছোট ব্যবসায়ী
• ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মুদ্রা-শিশু ঋণে ২ শতাংশ সুদের ভর্তুকি। সুরাহা ১,৫০০ কোটি টাকার
হকার, ঠেলাওয়ালা
• মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ। ৫০ লক্ষের জন্য ৫ হাজার কোটির প্রকল্প
কৃষক
• ২.৫ কোটি চাষি, জেলে, পশুপালকদের জন্য কিসান ক্রেডিট কার্ড। ২ লক্ষ কোটি টাকার বাড়তি ঋণের বন্দোবস্ত
• ঋণ নেওয়া চাষিদের দরকারে নাবার্ডের মাধ্যমে মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা
মোদী আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার পরে অর্থমন্ত্রী তার বিস্তারিত তথ্য জানাতে শুরু করেছেন। অন্তত পাঁচ দিন ধরে এই ঘোষণা চলবে। বুধবার প্রথম দিনে ছোট-মাঝারি শিল্পকে সুরাহা দিতে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বন্ধক ছাড়াই ঋণের কথা বলেছেন। আজও একই নীতি নিয়েছেন তিনি। চাষিদের ক্ষেত্রেও নাবার্ড বা কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাড়তি ঋণ, আদিবাসীদের রোজগার দিতে জঙ্গল দেখভালের তহবিল ব্যবহারের কথা বলেছেন। যা এমনিতেই হয়। ফলে এ দিনের ঘোষণায় পরিযায়ী শ্রমিকদের দু’মাসের রেশন বাবদ ৩,৫০০ কোটি টাকা ও ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণে ১,৫০০ কোটি টাকার সুদ-ভর্তুকি ছাড়া আর কোনও সরকারি খরচ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: হাতে এক নয়া পয়সাও নয়, পরিযায়ী-পাতে শুধুই চাল, ডাল
আরও পড়ুন: শ্রমিক ফেরাতে ১০৫ ট্রেন, কটাক্ষ কেন্দ্রের