পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের চার রাজ্যে ধারাবাহিক ভাবে শ্রমিক প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ায় দেশের করোনা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে চলেছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ১ মে থেকে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন পরিষেবা শুরু হওয়ার পর থেকে বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলেই মত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।
ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই ধাপে ধাপে শ্রমিকদের ফেরানোর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোরে সিদ্ধান্ত বদলিয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রেন আসার প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত দেয় নবান্ন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, ওই শ্রমিকরা অনেকেই সংক্রমিত এবং উপসর্গহীন। তারাই রাজ্যে ফিরে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। মন্ত্রকের আশঙ্কা, যথেষ্ট পরীক্ষা না-হলে আগামী কিছু দিন সংক্রমণের ওই ধারা বজায় থাকবে পূর্বের রাজ্যগুলিতে।
তবে বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গ একা নয়, কম-বেশি সব রাজ্যেই শ্রমিকেরা বাইরে থেকে ফিরেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘর-ফেরত শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ব্যর্থ। সেই কারণে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, যেখানেই শ্রমিকরা ফিরছেন, সেখানেই সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। গত ক’দিনের মতোই গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫,৬১১জন। যার ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১,০৬,৭৫০। গত এক দিনে ১৪০ জন মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৩০৩।
আজ প্রায় দশ দিন পরে করোনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান জানাতে সাংবাদিক সম্মেলন হয়। তাতে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও, তা অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম বলে ফের দাবি করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘শুরুতেই লকডাউন করায় গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখা গিয়েছে। উন্নত দেশগুলি শুরুতে লকডাউনের পথে না হেঁটে জনগোষ্ঠীতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গিয়েছিল। ফলে ওই সব দেশে মৃত্যুহার অনেক বেশি।’’ পাশাপাশি এ দেশে আশঙ্কাজনক রোগীর সংখ্যাও উন্নত দেশগুলির তুলনায় কম বলে দাবি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। কেন্দ্রের মতে, সংক্রমণের গোড়ার দিকে ২০ শতাংশের কাছাকাছি রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছিল। কিন্তু সচেতনতা বাড়ায় লোকে এখন উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। দ্রুত রোগ শনাক্ত হওয়ায় আশঙ্কাজনক রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। পরিসংখ্যান বলছে, আক্রান্ত লক্ষাধিক রোগীর মধ্যে কেবল ২.৯৪% রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট, ৩ %-কে আইসিইউ-তে ভর্তি ও ০.৪৫% রোগীকে ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়েছে। অর্থাৎ ৬.৩৯ শতাংশ রোগীরই কেবল হাসপাতালের জরুরি পরিষেবার প্রয়োজন হয়েছে।