Coronavirus Lockdown

সায় মিললেও কাজের চাকা কি গড়াবে? সংশয়

করোনার ‘হটস্পট’ হিসেবে যে ১৭০টি জেলা চিহ্নিত হয়েছে, বিরাট সংখ্যক শিল্পাঞ্চল সেখানে। ফলে সেখানে সবই স্তব্ধ থাকছে আপাতত।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৪
Share:

ছবি: এএফপি।

দেশের মানুষের পাতে খাবারের জোগান অক্ষুণ্ণ রাখতে রবি ফসল ঘরে তোলা জরুরি। স্তব্ধ অর্থনীতির চাকায় প্রাথমিক ঠেলাটুকু দিতে প্রয়োজন কৃষি, শিল্পের আড় ভাঙা। তাই ২০ এপ্রিলের পরে ‘করোনামুক্ত অঞ্চলে’ আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরুর ছাড়কে স্বাগত জানালেও তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। কারণ রোগ পরীক্ষায় গড়িমসি আর অধিকাংশ শিল্পাঞ্চল ‘হটস্পটে’র জেরে স্তব্ধ।

Advertisement

ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-কলকাতার অধিকর্তা অচিন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “থেমে থাকা অর্থনীতিকে ঠেলা দিতে কোথাও যে একটা শুরু করতে হবে, তাতে সন্দেহ নেই। খাদ্যশৃঙ্খল অটুট রাখতে কৃষিকাজ চালু রাখাও জরুরি। কিন্তু ২০ এপ্রিলের পরে তা শুরু করতে হবে বিপুল ঝুঁকি মাথায় নিয়েই। কারণ, এখনও পর্যন্ত দেশে করোনা পরীক্ষার যা হার, তাতে সত্যিই কত জন আক্রান্ত, তা অনুমান করা শক্ত। ফলে ঘরবন্দি দশা কেটে গেলে, সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানোর সম্ভাবনা।” জেএনইউয়ের অধ্যাপক অনমিত্র রায় চৌধুরীও বলেছেন, “লকডাউনের এই সময়কে কাজে লাগিয়ে যত বেশি সম্ভব পরীক্ষার দরকার ছিল। কিন্তু তা না-করায় দরজা খোলার পরে সংক্রমণ দাবানলের মতো ছড়ালে ফের ঘরবন্দি দশা শুরু হলে, আরও বিপাকে পড়বে অর্থনীতি।”

করোনার ‘হটস্পট’ হিসেবে যে ১৭০টি জেলা চিহ্নিত হয়েছে, বিরাট সংখ্যক শিল্পাঞ্চল সেখানে। ফলে সেখানে সবই স্তব্ধ থাকছে আপাতত। কিন্তু তার বাইরেও যে কাজ শুরুর সুযোগ রয়েছে, তার সামনেও বাধা হতে পারে কর্মী এবং কাঁচামালের অভাব আর গভীর অনিশ্চয়তা।

Advertisement

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তীর মতে, “সার্বিক অর্থনীতির উপরে অনিশ্চয়তার এমন প্রকাণ্ড ছায়া থাকলে, তার চাকা চালু হওয়া শক্ত। চাহিদা বা জোগানের অঙ্ক ছেড়েই দিলাম। এখানে প্রতিদিন নিজেদের শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কেই অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে। নতুন রোগীর খবর মিললেই বন্ধ হবে বেচা-কেনা। সেই অবস্থায় কেউ কাঁচামাল কিনে কিংবা কর্মী জুটিয়ে উৎপাদনে হাত দেবেন কী ভাবে, তা স্পষ্ট নয়।”

স্পষ্ট নয় আরও অনেক কিছুই। যেমন, ‘ক’ জেলার কারখানা উৎপাদনে ছাড় পেলেও তার কাঁচামাল হয়তো আসে ‘খ’ থেকে। আর কর্মীদের অনেকের বাড়ি ‘গ’ জেলায়। তখন ‘খ’ আর ‘গ’ ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হলে, ছাড় পেয়েও হাত গুটিয়ে থাকতে হবে ‘ক’-এর কারখানাকে। অচিনের কথায়, পরিযায়ী শ্রমিকরা এক বার বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে প্রথম দিকে খুব কঠিন হবে কর্মী পাওয়া। খালি পকেটে, ফের যে কোনও দিন কারখানায় তালা পড়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে তাঁরা আসবেন কেন? অনমিত্রের মতে, বহু লোকের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারের সম্ভাব্য চাহিদা আঁচ করতেই খাবি খেতে হবে সংস্থাগুলিকে।

তবু আইএসআই-কলকাতার অধ্যাপক অভিরূপ সরকারের মতে, “এত অসুবিধা সত্ত্বেও শুরু করাটা জরুরি। সবার আগে চাকা ঘোরা প্রয়োজন কৃষির। তবে বাজার তথা অর্থনীতিকে ছন্দে ফেরাতে বিস্তর মেরামতি দরকার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement