ছবি পিটিআই।
কৃষকদের জন্য আর্থিক প্যাকেজে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ঘর থেকে কার্যত এক পয়সাও অতিরিক্ত খরচ হল না!
করোনা-সঙ্কট থেকে মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতিকে উদ্ধারের জন্য মোদী ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, এর মধ্যে সরকারের ঘর থেকে কত খরচ হবে? শুক্রবার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার তৃতীয় দিনে চাষিদের জন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। এবং এর প্রায় সবটাই নাবার্ড বা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ। সরকারের ঘর থেকে খরচ কার্যত শূন্য!
আজকের প্যাকেজে সরকারি খরচ কতখানি? ২০ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যেই বা সরকারি খরচ কতখানি? সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘‘আমি এত পরিসংখ্যান দিয়ে ভারাক্রান্ত করতে চাই না।’’
আরও পড়ুন: লকডাউনে ছাড় কত, চিন্তা চিনকে পেরিয়ে
আরও পড়ুন: করোনার ‘সুযোগেই’ বদল কৃষিপণ্য আইন
সামান্য কিছু সরকারি খরচের সঙ্গে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের পরিমাণ জুড়ে কেন আর্থিক প্যাকেজ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ২০ লক্ষ কোটি টাকা দেখানো হচ্ছে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেন কর ফেরত (ট্যাক্স-রিফান্ড) বা প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা তোলার অঙ্ককেও সরকারি প্যাকেজে ঢোকানো হচ্ছে, বিরোধীরা সে প্রশ্নও তুলছেন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘ব্যাঙ্কের মাধ্যমে নগদ জোগান বাড়ানো সরকারি প্যাকেজ নয়। বিশ্বের আর কোথাও একে ফিসক্যাল স্টিমুলাস প্যাকেজের সঙ্গে যোগ করা হয় না।’’
আজ নির্মলার দাবি, বিশ্বের সব দেশেই এ ভাবে প্যাকেজ তৈরি হচ্ছে। আনন্দবাজারের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘‘আমরাও দেখছি, গোটা বিশ্ব কী করছে। কারা কী যোগ করছে। কর রিফান্ড আমরা প্যাকেজে যোগ করছি না। শুধু বলছি, করদাতাদের টাকা এখনই ফিরিয়ে দিচ্ছি।’’
কৌশিক বসু, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন, রঘুরাম রাজনের মতো অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অর্থনীতিকে বাঁচাতে রাজকোষ থেকে খরচ বাড়াতে হবে। যাতে বাজারে চাহিদা বাড়ে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে কি লাভ হবে? আর্থিক বিষয়ক সচিব তরুণ বজাজের যুক্তি, ‘‘ঋণ দিয়েও সমস্যায় পড়া ক্ষেত্রগুলিকে চাপের মুখ থেকে বার করে আনা যায়।’’ ব্যয়সচিব টি ভি সোমনাথনের দাবি, ‘‘সরকারি খরচের সঙ্গে ব্যাঙ্কের ঋণ যোগ করে আর্থিক প্যাকেজের হিসেব শুধু আমরাই করছি না। অনেক দেশই করছে।’’
প্রথম দিনে ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য ৫.৯ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজে রাজকোষ থেকে খরচের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয় দিনে গরিব, শ্রমিকদের জন্য ৩.১ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে সরকারি খরচ নেমে আসে ৫ হাজার কোটি টাকায়। চিদম্বরম বলেন, ‘‘আজকের ঘোষণায় সরকারি খরচ শূন্য বলে অর্থমন্ত্রীও উত্তর দেননি।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, ‘‘এ হল মোদীর স্টাইলে বিভ্রান্তি তৈরি।’’