লকডাউনে কাজজ হারিয়ে হেঁটে বাড়ির পথে পরিযায়ী শ্রমিকরা। —ফাইল চিত্র
লকডাউনে কত পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তার হিসেব না থাকায় মুখ পুড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান প্রকল্প’-এ নগদ আর্থিক সাহায্যের সংস্থান না থাকা নিয়েও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্র। সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিতে লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হল কেন্দ্র। অটল বিমিত ব্যক্তি কল্যাণ যোজনা (এবিভিকেওয়াই)-য় এই শ্রমিকদের মজুরির ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত করতে প্রচারে নেমেছে সরকার।
দু’বছর আগে চালু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে অগস্টে। কিন্তু এখনও তাতে বিশেষ সাড়া মেলেনি বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত তেমন সাড়া মেলেনি। তবে আমরা আশা করছি, ধীরে ধীরে তা বাড়বে। বিজ্ঞাপন দিয়ে উপভোক্তাদের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছনোর পরিকল্পনা চলছে।’’
লকডাউনে কাজ হারালে এবং ইএসআই অফিসে আবেদন করলে তিন মাসের অর্থাৎ ৯০ দিনের মজুরির ৫০ শতাংশ পাবেন শ্রমিকরা। লকডাউনের সময় কাজ হারিয়ে আবার অন্য কোথাও কাজে যোগ দিলেও এই আবেদন করতে পারবেন শ্রমিকরা এবং অন্যত্র কাজ পাওয়ার বিষয়টি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হবে না। তবে আবেদন করতে হবে সশরীরে ইএসআই অফিসে গিয়ে। পাশাপাশি আগে থেকেই যাঁরা ইএসআই সদস্য, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন। তাঁরা এই আর্থিক সাহায্যের জন্য বিবেচিত হবেন গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কাজ হারালেও।
আরও পড়ুন: কমছে দৈনিক মৃত্যু, দেশে ৭৩ লক্ষ আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ সাড়ে ৬৪ লক্ষ
অটল বিমিত ব্যক্তি কল্যাণ যোজনায় অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সাহায্যের প্রকল্প অবশ্য নতুন নয়। দু’বছরের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। এ বছর অগস্ট থেকে তার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। প্রকল্প চালুর সময় কাজ হারানো শ্রমিকদের জন্য সর্বোচ্চ সাহায্যের পরিমাণ ছিল মজুরির ২৫ শতাংশ। মেয়াদ বৃদ্ধির সময় সেটা দ্বিগুণ অর্থাৎ মজুরির ৫০ শতাংশ ক্ষতিপূরণের সংস্থান করা হয়েছে। তার পরেও শ্রমিকদের তেমন উৎসাহ নেই।
আরও পড়ুন: এক বছরে ৩৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বেড়েছে মোদীর, কমেছে শাহের
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মেয়াদ ও মজুরির ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানোর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০-র মতো আবেদনপত্র জমা পড়ছে। লকডাউনে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের হিসেব মাথায় রাখলে এই সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য। কেন এমন হাল? সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগের মতে, অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে জানেন না। কারণ টিভি, সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন নেই। নিয়মিত সেই ব্যবস্থা করলে তবেই সাধারণ মানুষের কাছে সেই প্রকল্প পৌঁছবে বলেই মত তাঁদের।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ-শৃঙ্খল রুখতে ২৫ মার্চ থেকে কার্যত রাতারাতি লকডাউন কার্যকর হয়েছিল গোটা দেশে। তার জেরে সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়েছিলেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফেরার এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছিল গোটা দেশ। সরকারের ‘পরিকল্পনাহীন’ লকডাউন ঘোষণার জেরেই শ্রমিকদের চরম দুর্দশার মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে এখনও আক্রমণ শানায় বিরোধীরা। পরবর্তীকালে ২০ লক্ষ কোটির আত্মনির্ভর ভারত অভিযান প্রকল্পে বিনামূল্যে খাদ্যাসামগ্রী দেওয়া ছাড়া এই শ্রমিকদের জন্য সরকার কার্যত আর কোনও বন্দোবস্ত করেনি বলেও সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। অটল বিমিত ব্যক্তি কল্যাণ যোজনার এই সাহায্য তাতে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মত।