ছবি: সংগৃহীত।
ম্যাডাম, কোনও হিসেবই তো মিলবে না দেখা যাচ্ছে!
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সামনে কাঁচুমাচু মুখে এই কথাটাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। কারণ ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী যে সব অনুমানের ভিত্তিতে বাজেট পেশ করেছিলেন, করোনা-সঙ্কট ও লকডাউনের জেরে তার কোনওটাই মেলার সম্ভাবনা কঠিন হয়ে উঠছে। আমলারা বলছেন, পরিস্থিতি যা, তাতে লকডাউন উঠলে কার্যত একটা নতুন বাজেট পেশ করতে হবে।
বাজেটে ধরা হয়েছিল চলতি অর্থ বছরে জিডিপি সংখ্যার হিসেবে ১০ শতাংশ বাড়বে। বাস্তবে আর্থিক বৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ ছোঁবে। আর্থিক ঝিমুনির জেরে তখন এই অনুমানই বাড়াবাড়ি কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। আর এখন আইএমএফ-এর পূর্বাভাস, লকডাউনের পরে ভারতের বৃদ্ধির হার ১.৯ শতাংশে আটকে যাবে। অথচ ওই আনুমানিক জিডিপি-র ভিত্তিতেই নির্মলা রাজকোষ ঘাটতি ৩.৫ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক-স্বাধীনতা: কাশ্মীর-পরিস্থিতির কারণেই আরও পতন ভারতের!
আর্থিক বিষয়ক দফতরের এক কর্তা বলেন, “ঘাটতি মেটাতে ৭.৮ লক্ষ কোটি টাকা ধারের কথা ছিল। এখন জিডিপি কমবে। ধারের পরিমাণ বাড়বে। বাড়বে ঘাটতির হারও। তার উপরে লকডাউনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য কম বলে জিএসটি, শুল্ক আদায় কমবে। আয়কর, কর্পোরেট কর বাবদ আয়ও কমবে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই বাবদ বাড়তি খরচ হবে। ঘাটতি বেড়ে কোথায় পৌঁছবে, ভাবাই যাচ্ছে না।”
আরও পড়ুন: গুণমান নিয়ে প্রশ্ন, চিনা কিটে আপাতত করোনা-পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশ
হিসেব-নিকেশ নতুন করে কষতে হলেও বাজেটের দিশা পাল্টাবে কি?
অর্থ মন্ত্রকের সূত্রের মতে, সে সম্ভাবনা কম। মূলত এক খাত থেকে খরচ ছেঁটে অন্যত্র ঢালতে হবে। করোনা-মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় আরও অর্থ জোগাতে হবে। গরিব মানুষের সাহায্যেও অন্য খাত থেকে খরচ কমাতে হবে। গরিব মানুষকে সুরাহা দিতে ইতিমধ্যেই ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে। তবে তার প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকাই বাজেটে বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও প্রায় ৪-৫ লক্ষ কোটি টাকা দাওয়াইয়ের দাবি উঠেছে। তা কোথা থেকে আসবে, সেটাই প্রশ্ন। ব্যয় দফতরের এক কর্তা বলেন, “এ বছর মোট খরচ ধরা হয়েছিল ৩০.৪২ লক্ষ কোটি টাকা। এটা আরও বাড়বে।”
বাজেটে অনুমান ছিল সরকারের মোট আয় হবে ২২.৪৬ লক্ষ কোটি টাকা। আশঙ্কা হল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আয়কর, কর্পোরেট কর, বিলগ্নিকরণ সব দিকেই আয় কমবে। রাজস্ব দফতরের এক কর্তা বলেন, “কেন্দ্রের কর বাবদ আয় কমবে বুঝলেও বাজেটের আনুমানিক আয়ের ভিত্তিতেই রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় করের ভাগ দেওয়া হচ্ছে। সে কারণেই সোমবার এপ্রিলের কেন্দ্রীয় করের ভাগ হিসেবে রাজ্যগুলির জন্য প্রায় ৪৬,০৩৮ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। যাতে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলির অসুবিধা না-হয়।”