গ্রামে ফিরছেন অবধেশরা। ছবি: সংগৃহীত।
গোটা দেশে জারি হয়েছে ২১ দিনের জন্য লকডাউন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েছেন বহু মানুষ। বিশেষ করে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকেরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছোট ছোট কারখানায় কাজ করেন। দেশ জুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জেরে সমস্ত রাজ্যে যানবাহন থেকে শুরু করে সবই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘরবন্দি মানুষ। ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক তো ছড়িয়েইছে, তবে সবচেয়ে বেশি যে আতঙ্ক তাঁদের ঘিরে ধরছে তা হল কী ভাবে ঘরে ফিরবেন তাঁরা। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘরে ফেরার তাড়া পড়ে গিয়েছে তাঁদের মধ্যে। কিন্তু উপায় কোথায়? যোগাযোগ ব্যবস্থা যে পুরো থমকে গিয়েছে!
উত্তরপ্রদেশের ছবিটাও একই রকম। রাজ্যের বারাবাঁকি থেকে উন্নাওয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন বছর কুড়ির যুবক অবধেশ কুমার। একটি স্টিল কারখানায় কাজ করেন তিনি। লকডাউনের পর থেকেই আতঙ্কে ভুগছেন তিনি। কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন! কারখানারই একটি ঘরে আর পাঁচ জনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। লকডাউন চালু হওয়ার পরই মালিক বলে দিয়েছেন ঘর ছেড়ে দিতে। এ রকম পরিস্থিতিতে কোথায় যাবেন, কী করবেন, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না অবধেশ। শেষমেশ ঝুঁকি নিয়েই বেরিয়ে পড়েন বাড়ির উদ্দেশে।
উন্নাও থেকে বারাবাঁকির দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। অবধেশ ঠিক করলেন এই দীর্ঘ পথ তিনি হেঁটেই পাড়ি দেবেন। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়। মঙ্গলবার তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। পথে যদি কোনও বাধা না আসে তা হলে বাড়ি পৌঁছবেন বৃহস্পতিবার। এমনটাই জানিয়েছেন অবধেশ। শুধু অবধেশ একা নন, তাঁর সঙ্গে আরও বেশ কয়েক জন জুটে গিয়েছেন। সেই দলে বছর পঞ্চাশের রাজমলও আছেন।
আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে আটকে ২৭ বাঙালি, উদ্ধার পেতে কাতর আর্তি নবান্নের কাছে
আরও পড়ুন: লকডাউনে মোট ক্ষতি হতে পারে ৯ লক্ষ কোটি টাকা! হিসাব দিল ব্রিটিশ সংস্থা
টানা ৩৬ ঘণ্টা পথ হেঁটে ফেলেছেন অবধেশ। এক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “এ ভাবে বেরিয়ে পড়তে চাইনি। কিন্তু উপায় ছিল না।” ভিনরাজ্যে থাকা কর্মীদের বাইরে না বেরতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও অবধেশরা কেন ঝুঁকি নিলেন? সাংবাদিকরা এ প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, “কী ভাবে থাকা সম্ভব? কারখানার যে ঘরে থাকতাম সেই ঘর খালি করে দিতে বলেছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে বাড়ি ফেরা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। যানবাহন নেই পথে। তাই হেঁটেই যাচ্ছি। গ্রামেরই আরও বহু ছেলে ওই কারখানায় কাজ করে। তাঁরাও আমার সঙ্গে ফিরছে।”
এই দলের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হলেন রাজমল। তিনি বলেন, “গ্রামের বাড়িতে যত্সামান্য খাবার বেঁচে আছে। আমার উপার্জনের উপর সংসার চলে। এখন কোনও কাজ নেই। শুনেছি, রাজ্য সরকার আমাদের মতো দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের জন্য ১০০০ টাকা করে বরাদ্দ করেছেন। আমার নাম নথিভুক্ত নেই। কেউ আসেওনি এ ব্যাপারে জানাতে। অগত্যা ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছি।”
শুধু একা অবধেশ বা রাজমল নন, ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এমন অনেক শ্রমিক আতঙ্কে ভুগছেন। বাড়ি ফেরার জন্য উদ্বিগ্ন। কিন্তু অবধেশদের মতো ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন না।