—ফাইল চিত্র।
প্রতিষেধক সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভারত বায়োটেক সংস্থাকে তাদের তৈরি প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন-এর দু’টি ডোজ়ের ছ’মাসের মাথায় ফের বুস্টার ডোজ় মানবশরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। এ ব্যাপারে আজ সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। প্রতিষেধক নেওয়া ব্যক্তিদের করোনার বিরুদ্ধে বাড়তি সুরক্ষা দেওয়ার ভাবনা থেকে ওই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
দেশ জুড়ে টিকার হাহাকার। প্রতিষেধকের অভাবে অনেক রাজ্যে ধাক্কা খাচ্ছে টিকাকরণ প্রক্রিয়া। এই পরিস্থিতিতে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণের জন্য নাম নথিভুক্ত করার নীতিতে পরিবর্তন আনল কেন্দ্র। এ বার থেকে কো-উইন বা আরোগ্য সেতু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে নাম নথিভুক্তির পাশাপাশি, সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়েও প্রতিষেধক নেওয়া যাবে। টিকার অপচয় রুখতে ওই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
গত ১ মে থেকে শুরু হয়েছিল ১৮-৪৪ বছরের ব্যক্তিদের টিকাকরণ অভিযান। আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করে রাখার অতীতের নিয়ম যেমন ছিল তেমন থাকছে। নয়া নিয়মে এ বার কোনও ব্যক্তি চাইলে সেই দিন সরকারি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে প্রতিষেধক নিতে পারবেন। কেন্দ্রের যুক্তি, গত তিন সপ্তাহে অনেক কেন্দ্রে দেখা গিয়েছে, লোকে অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করে শেষ পর্যন্ত প্রতিষেধক নিতে যাননি। প্রতিষেধকের অপচয় হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি সরাসরি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। যে ব্যক্তিরা অনুপস্থিত, তাঁদের বরাদ্দ টিকা তখন কাজে লাগানো যাবে। নতুন নির্দেশে টিকাকেন্দ্রে অব্যবহৃত প্রতিষেধক থাকলে তাৎক্ষণিক ভাবে নতুন টিকা-প্রাপকদের নাম নথিভুক্ত করে তাঁদের টিকা দেওয়া যাবে। তবে প্রাথমিক ভাবে ওই পরিষেবা সরকারি টিকাকেন্দ্রেই পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, যাঁরা কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতিষেধক পাওয়ার পরে ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। এমন ১৯২ জন স্বেচ্ছাসেবীর (১৮-৫৫ বছর) উপরে দেশের ৯টি কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ় দিয়ে তার প্রভাব লক্ষ্য করা হবে। দিল্লির এমসে গোড়া থেকেই কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দায়িত্বে রয়েছেন সঞ্জয় রাই। তিনি বলেন, ‘‘বুস্টার ডোজের অর্থ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এক ধাপ বুস্টিং বা জোরদার করা। যদি দেখা যায়, ছয়-আট মাস পরে বা এক বছর পরে কোভ্যাক্সিন-প্রাপকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে সে ক্ষেত্রে নতুন করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে কেউ বুস্টার ডোজ় নিতে পারেন। তা কাজ করতে পারে আবার না-ও করতে পারে।’’ তিনি জানান, যাঁদেরকে বুস্টার ডোজ় দেওয়া হবে, তাঁদের আগামী ছ’মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। যদি পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়, তবেই বুস্টার ডোজ় দেওয়ার কথা ভাবা হবে।
রাজ্যগুলিকে প্রতিষেধক নির্মাতাদের কাছ থেকে সরাসরি প্রতিষেধক কেনার ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সোমবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের দাবি, ফাইজ়ার, মর্ডানার মতো সংস্থাগুলি দিল্লি সরকারকে সরাসরি প্রতিষেধক বিক্রিতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, বেসরকারি ওষুধ সংস্থাগুলি ব্যবসায়িক স্বার্থ মাথায় রেখে কেন্দ্রকে চটিয়ে রাজ্যগুলিকে প্রতিষেধক বিক্রিতে নারাজ। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়ালের যুক্তি, ‘‘হাতে কী পরিমাণ টিকা রয়েছে, কতটা সরবরাহে সক্ষম, তার উপরেই সংস্থাগুলির সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে।’’