Coronavirus in India

লকডাউনে ফের রুজির আশঙ্কা, দারিদ্রের বৃদ্ধি

ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত সরকারি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, দৈনিক ন্যূনতম মজুরি অন্তত ৩৭৫ টাকা হওয়ার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২১ ০৬:৪৩
Share:

ফাইল চিত্র।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে ফের দেশ জুড়ে লকডাউন জারির সম্ভাবনায় শ্রমিকদের মনে নতুন করে রুটিরুজি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারই মধ্যে আজ বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট জানাল, কোভিডের প্রথম ঢেউ দেশের ২৩ কোটি মানুষকে নতুন করে দারিদ্রের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

Advertisement

দেশের চাকরি, কর্মসংস্থানের ছবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টেট অফ ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া-২০২১’-র রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর এপ্রিল ও মে-তে দেশ জুড়ে লকডাউনের পরে দেশের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষ তাদের আয়ের পুরোটাই খুইয়েছিলেন। এমনিতেই কম আয়। তার উপরে রোজগার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের ২৩ কোটি মানুষের দৈনিক ন্যূনতম আয়ও হয়নি।

ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত সরকারি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, দৈনিক ন্যূনতম মজুরি অন্তত ৩৭৫ টাকা হওয়ার কথা। এই আয়ের নীচে থাকা মানুষের সংখ্যা অতিমারির সময়ে ২৩ কোটি বেড়েছে। ফলে গ্রামে দারিদ্রের হার বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। শহরে দারিদ্র বেড়েছে ২০ শতাংশ। অতিমারি না এলে গ্রামে ও শহরে অন্তত ৫ কোটি মানুষ এই দারিদ্রসীমার উপরে উঠে আসতেন।

Advertisement

আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমীক্ষা বলছে, অতিমারির ধাক্কায় গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছেন। রোজগার কমে যাওয়ায় মানুষকে খাওয়া কমাতে হয়েছে। ধার করতে হয়েছে। ঘটি-বাটি বেচে পেট চালাতে হয়েছে। সরকারি সাহায্যে চরম দুর্দশা কাটানো গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সবথেকে দুর্দশাগ্রস্তদের অনেকের কাছেই সরকারি সাহায্য পৌঁছয়নি।

লকডাউনের পরেও হাল শুধরেছে কি? সমীক্ষা বলছে, গত বছরের লকডাউনের ফলে ১০ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। ২০২০-র শেষে তাদের মধ্যে দেড় কোটি মানুষ কাজ ফিরে পাননি। যে সব রাজ্যে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি ছিল, সেখানে কাজহারাদের সংখ্যাও বেশি। রোজগার ফিরলেও কাজের চরিত্র বদলেছে। যারা সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করতেন, তারা অসংগঠিত ক্ষেত্রের কাজে যোগ দিয়েছেন। মহিলারা কাজ হারিয়েছেন বেশি। তাঁদের ৪৭ শতাংশ আর কাজ ফিরে পাননি। চাকরিজীবীদের অনেককেই নিজের রোজগারের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে বা মাসমাইনের শ্রমিকদের দিনমজুরির কাজে ঢুকতে হয়েছে। ২০১৯-এর শেষের সঙ্গে ২০২০-র শেষ সময়ের তুলনায়, সংগঠিত ক্ষেত্রের চাকরিজীবীদের মধ্যে যারা কাজ হারিয়েছিলেন, তাদের অর্ধেক আর মাস-মাইনের চাকরি ফিরে পাননি। এঁদের ৩০ শতাংশ স্বনির্ভর হয়ে রোজগারের চেষ্টা করছেন। ১০ শতাংশ অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। মাত্র ৯ শতাংশ মাস-মাইনের চাকরি করছেন, কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রে।

এখন রাজ্যে রাজ্যে ফের লকডাউনের জেরে নতুন করে রুটিরুজি নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা চিন্তায় পড়েছেন। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বলছে, গত বছরের লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ৮১ শতাংশ কাজ হারিয়েছিলেন। আজ শ্রমিকদের উপরে গবেষক ও সমাজকর্মীদের সংগঠন ‘স্ট্র্যান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’ জানিয়েছে, রাজ্য স্তরে লকডাউনের ফলে এ বার এখনই ৮১ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গড়ে গত ১৯ দিন ধরে কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। ৬৮ শতাংশ শ্রমিক গত মাসে পুরো বা আংশিক বেতন পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ৮২ শতাংশই আর কোনও বেতনের মুখ দেখেননি। অনেক পরিযায়ী শ্রমিক গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই এখনও অনিশ্চিত। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চলছে না। ট্রেনে গেলে টিকিটের খরচ রয়েছে। বাসে বা গাড়িতে অনেক বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। সে কারণেও অনেকে গ্রামে যেতে পারছেন না। কিন্তু শহরে থেকে গেলেও ৭৬ শতাংশ মানুষের রেশন বা নগদ সাহায্যের দরকার পড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement