প্রতীকী ছবি।
পাড়ার ওষুধের দোকান তো বটেই, মুদি বা পান-সিগারেটের দোকানেও বিকোচ্ছে সার্জিক্যাল মাস্ক। সেগুলি মুখে লাগিয়ে দিব্যি ঘুরছেন লোকজন। কিন্তু সার্জিক্যাল মাস্ক পরলেই কি করোনা থেকে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকা সম্ভব? এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
সম্প্রতি এক দল বাঙালি গবেষক দেখিয়েছেন, সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক মোটেই যথেষ্ট নয়। একমাত্র ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্কই করোনা থেকে ‘পুরোপুরি’ রক্ষা করতে পারে। এ কথা প্রযোজ্য কাপড়ের মাস্কের ক্ষেত্রেও। পথেঘাটে, ফুটপাতে যে-সব কাপড়ের মাস্ক ঢেলে বিকোচ্ছে, সেগুলিও নিশ্চিন্ত রক্ষাকবচ নয় বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত।
ত্রিস্তরীয় মাস্ক ছাড়া রক্ষাকবচ যে জোরালো হবে না, তা অবশ্য গোড়া থেকেই বলে আসছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা। তবে ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান দিয়েগোর অভিষেক সাহা, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বেতপ্রভ চৌধুরী এবং বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের সপ্তর্ষি বসু ত্রিস্তরীয় মাস্কের কার্যকারিতা গবেষণাগারে হাতেকলমে দেখেছেন। হাঁচিকাশির ক্ষেত্রে মুখ থেকে যে-সব ‘ড্রপলেট’ বা বেরোয়, কৃত্রিম ভাবে তা তৈরি করে (নির্দিষ্ট গতিবেগ-সহ) এই পরীক্ষা করা হয়। গবেষণার ফল ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামে একটি আমেরিকান বিজ্ঞান জার্নালে।
ওই গবেষকদের দাবি, মুখে কোনও মাস্ক না-থাকলে কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে যে-ড্রপলেট বেরোয়, তার মধ্যে অনেক কণাই আকারে বড়, ফলে সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলি মাটিতে পড়ে যায়। কিন্তু এক বা দুই স্তরের মাস্ক পরে কাশলে বা হাঁচলে মাস্কে তা আটকায় না। বরং যে-সব কণা মাস্ক ভেদ করে বেরিয়ে আসে, সেগুলি ভেঙে আরও ছোট হয়ে যায়। এই ছোট কণা (‘এরোসল’) হালকা হওয়ায় মাটিতে না-পড়ে বাতাসে ভেসে থাকে অনেক ক্ষণ। ফলে অন্য কারও শরীরে সেগুলির প্রবেশ করার আশঙ্কাও অনেক বেশি। একমাত্র ত্রিস্তরীয় মাস্কই প্রায় সম্পূর্ণ রূপে মুখনিঃসৃত কণার বাইরে আসা আটকাতে পারে।
“মাস্ক ত্রিস্তরীয় হতেই হবে, তা যে-কাপড়েরই তৈরি হোক না কেন। শুধু তিন স্তরের মাস্কই প্রায় সমস্ত ড্রপলেট আটকাতে সক্ষম। সব সার্জিক্যাল মাস্ক কিন্তু ত্রিস্তরীয় হয় না। এক বা দুই স্তরের হলে সার্জিক্যাল মাস্কও নিরাপদ নয়,” বলেন অভিষেকবাবু। কোভিড পরিস্থিতিতে মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসাও বেড়েছে। তাতেই যেনতেন প্রকারে তৈরি মাস্ক দেদার বিকোচ্ছে বাজারে। সে-কথা মেনে নিয়ে সপ্তর্ষিবাবু বলছেন, “কাপড়ের বা সার্জিক্যাল, যে-মাস্কই কিনুন, হাতে ধরে পরীক্ষা করে নেবেন, সেটিতে তিনটি স্তর রয়েছে কি না।”
তা হলে কি ত্রিস্তর না-হলে মাস্ক আদৌ পরাই যাবে না? অভিষেকবাবু বলছেন, “এক বা দুই স্তরের মাস্ক পরে থাকলে অন্তত ৩০ শতাংশ ড্রপলেট আটকানো যায়। মাস্ক আদৌ না-পরার থেকে সেটা নিশ্চয়ই ভাল।’’