ব্রিটেনে অক্সফোর্ড-টিকার প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: এপি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি কোভিড-১৯-এর টিকা ভারতীয়দের উপরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-র অনুমতি চাইল সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই)। একটি সূত্রে আজ জানা গিয়েছে, পুণের এই ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাটি গত কালই এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত পাঠিয়েছে ডিসিজিআই-কে। সেখানে বলা হয়েছে, এই টিকা সুস্থ এবং প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়দের জন্য কতটা নিরাপদ, তা পরীক্ষা করে দেখতে চায় তারা। যার জন্য ১৮ বছরের বয়সের উপরে ১৬০০ জনের নাম নথিভুক্ত করা হবে।
ব্রিটেনে এই টিকার প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতে এই টিকার উৎপাদনের জন্য ফার্মা সংস্থা সংস্থা ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এসআইআইয়ের। ভারত ছাড়াও মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলির জন্য টিকা তৈরি করবে সংস্থাটি। সংস্থার সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ১০০ কোটি টিকা তৈরি করবেন তাঁরা।
আজই আবার তিনটি সংস্থার র্যাপিড কিট আমদানির লাইসেন্স বাতিল করেছে ডিসিজিআই। টিকা পরীক্ষা, গবেষণার গতির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও। সঙ্গে উদ্বেগ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭৫৭ জনের। মোট আক্রান্ত ১৩,৩৬,৮৬১। করোনায় মৃত্যুর নিরিখে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র (১৩,১৩২)। তার পরে যথাক্রমে দিল্লি (৩,৭৭৭), তামিলনাড়ু (৩,৩২০), গুজরাত (২,২৭৮), কর্নাটক (১,৭২৪), উত্তরপ্রদেশ (১,৩৪৮)।
আরও পড়ুন: পার্ক সার্কাস থেকে মেডিক্যাল ৯০০০! না দেওয়ায় করোনা আক্রান্ত ২ শিশুকে নামিয়ে দিল অ্যাম্বুল্যান্স
আরও পড়ুন: করোনায় রাজ্যে এক দিনে মৃত্যু ৪২ জনের, ফের বাড়ল সংক্রমণের হার
দেশে আক্রান্ত - ১৩,৩৬,৮৬১
মৃত - ৩১,৩৫৮
সুস্থ - ৮,৪৯,৪৩১
(শনিবারের করোনা বুলেটিন। সূত্র: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক)
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতের মতো বিরাট দেশের প্রতিটি রাজ্যে একই সঙ্গে কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা শীর্ষে পৌঁছবে না। যেমন, দিল্লিতে যদি এই মাসের শেষে বা অগস্টের শুরুতে ‘পিক’ হয়, তবে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের মতো রাজ্যে সেপ্টেম্বরে আসবে সেই চূড়ান্ত পরিস্থিতি। ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেল্থ’-এর অধ্যাপক জিভিএস মূর্তির ব্যাখ্যা, সে ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে চূড়ান্ত পরিস্থিতি বা ‘পিক’-এ পৌঁছতে বেশি সময় লাগতে পারে, কারণ সে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফেরার পরেই সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। কাজেই প্রতিটি রাজ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী আলাদা আলাদা সময়ে সংক্রমণের ধাক্কা মারাত্মক আকার নেবে। এই অবস্থায় ভারতে করোনা পরীক্ষার হার বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাদের দাবি, প্রতি দিন দেশে অন্তত ৪ লক্ষ ২০ হাজার মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক করোনা-পরীক্ষার হার বাড়ছে বলে দাবি করলেও উত্তরপ্রদেশে করোনা ধরা পড়ার ভয়ে পরীক্ষাই হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। কংগ্রেস নেত্রীর দাবি, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ‘পরীক্ষা নেই, করোনাও নেই’ নীতি রাজ্যের পরিস্থিতি আরও মারাত্মক করে তুলছে। তিনি লিখেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের কোয়রান্টিন সেন্টারগুলির হাল ভয়াবহ। সেখানে এমনই অব্যবস্থা যে, মানুষ করোনার থেকেও সেন্টারে থাকতে বেশি ভয় পাচ্ছেন। এটা রাজ্য সরকারের মস্ত বড় ব্যর্থতা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘স্বচ্ছ ভাবে পরীক্ষার হার না বাড়ালে, অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হবে না।’’