ছবি: পিটিআই।
দেশজুড়ে কোভিড সংক্রমণ ক্রমশ কমছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে উপসর্গযুক্ত সংক্রমণের হার তলানিতে ঠেকতে পারে। রবিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে এ কথাই জানিয়েছেন ‘ন্যাশনাল সুপারমডেল কমিটি ফর কোভিড-১৯’ চেয়ারম্যান তথা আইআইটি হায়দরাবাদের অধ্যাপক মাথুকুমাল্লি বিদ্যাসাগর। তিনি জানান, দেশে সংক্রমণ চূড়ান্ত মাত্রা (পিক) পেরিয়ে গিয়েছে।
তবে সংক্রমণ কমানোর ধারা বজায় রাখতে হলে আবশ্যিক শর্ত হিসেবে সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে। বেপরোয়া হলে ফের এক মাসে ২৬ লক্ষ সংক্রমণ ধরা পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। যদিও এ দিনই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন মেনে নিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের কিছু অঞ্চলে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে।
কোভিডের পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ যাচাইয়ে একাধিক আইআইটি, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট, পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি-সহ একাধিক প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক-বিজ্ঞানীদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেছিল কেন্দ্র। সেই কমিটির বিশ্লেষণই এ দিন ঘোষণা করা হয়। গাণিতিক মডেলের ভিত্তিতে পূর্বাভাস দেওয়া হলেও, তা অক্ষরে অক্ষরে মিলবে এমন নাও হতে পারে। তাই আবশ্যিক সাবধানতার কথাই বারবার শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিদ্যাসাগর জানান, বিভিন্ন উপাদান ও পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে তৈরি গাণিতিক মডেলে যে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ঠিক কি না, সেটা যেমন যাচাইয়ের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কী হতে পারে, তা-ও অনুমান করা গিয়েছে। কমিটির বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে ৬৬ লক্ষ। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে এই সংখ্যাটি ১ কোটি ৬ লক্ষ হতে পারে। মৃত্যুর হার হবে ০.০৪ শতাংশ। লকডাউন না করলে জুলাই-অগস্টে আক্রান্ত হতেন এক কোটি ৪০ লক্ষ এবং প্রায় ২৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারত। মে মাসে লকডাউন করলেও অগস্টের শেষে ৫০ লক্ষ আক্রান্ত হতেন।
আরও পড়ুন: উৎসবে বেপরোয়া মনোভাব ও ভিড়ে বিপদ হতে দেরি হবে না
শ্রমিকদের আগে বাড়ি ফিরিয়ে কেন লকডাউন করা হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন গাণিতিক বিশ্লেষণে কমিটির দাবি, শ্রমিকদের আগে ফিরিয়ে লকডাউন করলে সংক্রমণ বাড়ত। কেন্দ্র যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ক্ষতি কম হয়েছে। যদিও অনেকের বক্তব্য, কেন্দ্র নিযুক্ত কমিটি কি আদৌ সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরবে?
লকডাউনের ভবিষ্যৎ নিয়েও এ দিন বার্তা দিয়েছে সুপারমডেল কমিটি। তাদের বক্তব্য, আর লকডাউন করার প্রয়োজন নেই। সুরক্ষাবিধি মেনেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। বস্তুত, কেন্দ্রও আনলকের একই কথা বলছে। তবে কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী একেবারে স্থানীয় স্তরে বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে বলেও জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: অসচেতন জনতা, ১৫ জেলায় ‘বিপদসঙ্কেত’ দেখছে স্বাস্থ্য দফতর
কেন এ ভাবে সংক্রমণ কমছে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে কমিটি। কমিটির সদস্য এবং ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স স্টাফের ডেপুটি চিফ (মেডিক্যাল) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাধুরী কানিতকরের মতে, সুরক্ষাবিধি আরোপের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে। তাই একটা পর্যায়ের পর সংক্রমণ কমছে। তবে সংক্রমণ নির্মূল করতে ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে বলেও তিনি জানান।
তবে অনেকেই বলছেন, বহু ধরনের গাণিতিক মডেলই গত কয়েক মাসে হয়েছে। যার অধিকাংশ মেলেনি। এই মডেলও মিলবে কি না, তা ভবিষ্যতই বলবে।