ছবি: সংগৃহীত।
টিকা উৎসব না-করে, যাদের প্রয়োজন তাঁরা যাতে প্রতিষেধক পান—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তা নিশ্চিত করতে বললেন রাহুল গাঁধী। সকল দেশবাসীর কাছে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে এর রফতানি বন্ধের পক্ষেও সওয়াল করলেন তিনি। পাল্টা আক্রমণে বিজেপি আজ প্রশ্ন তুলেছে, রাহুল নিজে কেন এখনও প্রতিষেধক নেননি?
দেশে সংক্রমণের সূচক গত দু’মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী। করোনা-যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার, প্রতিষেধকেই দেখা দিয়েছে ঘাটতি। প্রতিষেধক চেয়ে কেন্দ্রের কাছে রোজ দরবার করছে একের পর এক রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে গত কাল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে আগামী ১১-১৪ এপ্রিল টিকা উৎসব পালনের ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, টিকাই যেখানে বাড়ন্ত, সেখানে টিকা উৎসবের ডাক দেওয়ার কী অর্থ? আজ প্রধানমন্ত্রীকে এক চিঠিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল লিখেছেন, “প্রতিষেধকের ঘাটতি একটি গুরুতর সমস্যা। এটা কোনও উৎসব নয়। তাই অবিলম্বে বয়সের গণ্ডি তুলে দিয়ে, যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের প্রতিষেধক দেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হোক। এর পাশাপাশি, টিকার ঘাটতি মেটাতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে থাকা অন্য প্রতিষেধকগুলিকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
গোড়ার দিকে দেশে প্রতিষেধকের চাহিদা কম থাকায় ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’-র লক্ষ্যে প্রায় ৬ কোটি ডোজ় প্রতিষেধক বিভিন্ন দেশকে দিয়েছে ভারত। বর্হিবিশ্বে ভারতের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও, এখন তা কার্যত বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদী সরকারের কাছে। রাহুল আজ চিঠিতে সরকারের ওই পদক্ষেপের সমালোচনা করে অবিলম্বে প্রতিষেধক বিদেশে পাঠানো বন্ধের দাবি তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যগুলি যেখানে প্রতিষেধক চেয়ে পাচ্ছে না, সেখানে কার ভুলে ৬ কোটি ডোজ় প্রতিষেধক বিদেশে পাঠানো হল? সরকারের অন্যান্য ভুলের মতোই এই ক্ষেত্রেও কার দোষে দেশবাসীকে প্রতিষেধকের অভাবে ভুগতে হচ্ছে?’’
টিকার আকাল
তুমুল তরজা
ক’দিন ধরেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিষেধক চেয়ে পরের পর আবেদন আসছে কেন্দ্রের কাছে। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, ওড়িশার পরে আজ তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাজস্থান। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত প্রধানমন্ত্রীকে এক চিঠিতে জানিয়েছেন, রাজ্যের হাতে মাত্র দু’দিনের প্রতিষেধক রয়েছে। অবিলম্বে ৩০ লক্ষ ডোজ় পাঠানো হোক।
অভিযোগ উঠেছে স্বজনপোষণেরও। মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটির কাছাকাছি। কেন্দ্র তাদের দিয়েছে ১.৬ কোটি ডোজ়। গুজরাতের জনসংখ্যা সাড়ে ছয় কোটি অর্থাৎ মহারাষ্ট্রের অর্ধেক হলেও প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে প্রতিষেধক গিয়েছে প্রায় ১.৫ কোটি ডোজ়।
প্রতিষেধক বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রিভূত করে রাখা নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল বেশ কিছু রাজ্য। আজ রাহুলও বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, স্বাস্থ্য রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয়। কিন্তু প্রতিষেধক সংগ্রহের প্রশ্নে রাজ্যের দাবিদাওয়াকে উপেক্ষা করেছে কেন্দ্র। মোবাইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাম নথিভুক্তির ব্যবস্থা করায় আধুনিক প্রযুক্তিতে সড়গড় নন এমন ব্যক্তিরা প্রতিষেধক পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিষেধক দেওয়ার প্রশ্নে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা শুরুতে ভাল অবস্থানে থাকলেও, টিকাকরণের হার শামুকের গতিতে এগোচ্ছে। দেশে টিকাকরণের পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও তিন মাসে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ টিকা পেয়েছেন।’’ এই গতিতে চললে দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে বছর কেটে যাবে বলেই মনে করছেন রাহুল।
রাজ্যগুলির প্রতিষেধকের দাবিতে রীতিমতো অস্বস্তিতে কেন্দ্রও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন যতই দাবি করুন, রাজ্যগুলির কাছে যথেষ্ট প্রতিষেধক রয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক টিকাকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার ঘটনায় টিকাকরণ অভিযানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেই মত স্বাস্থ্যকর্তাদের। রাহুল এই পরিস্থিতির জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করায় শাসক শিবির পাল্টা আক্রমণে নেমেছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, “আদৌও প্রতিষেধকের ঘাটতি নেই ভারতে। রাহুল স্রেফ নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন।’’ সরাসরি রাহুলকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেন প্রসাদ। বলেন, ‘‘বয়স হওয়া সত্ত্বেও রাহুল নিজে কেন প্রতিষেধক নিচ্ছেন না? এটা কি তাঁর ভুল? নাকি তিনি যে মাঝেমধ্যেই বিদেশে গোপন সফরে যান, সেখানে প্রতিষেধক নিয়ে নিয়েছেন? যা তিনি বলতে চান না!’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনৈতিক আক্রমণ শানালেও, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে অবিলম্বে দু’টি প্রতিষেধকের উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কিন্তু রাতারাতি তা হওয়া সম্ভব নয় বলে গত কালই জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে যত দিন না নতুন এক বা একাধিক প্রতিষেধক বাজারে আসছে, তত দিন চাহিদা পুরোপুরি মেটানো কার্যত অসম্ভব। নতুন প্রতিষেধক কবে আসবে তার কোনও দিনক্ষণ এখনই জানাতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা।