করোনা-পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে নমুনা। বৃহস্পতিবার তিরুমালায়। পিটিআই
দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টিকাতেই বেশি ভরসা রাখতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, ভারতের মতো জনবহুল দেশে টিকার বিকল্প নেই। মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দু’ভাবে গড়ে ওঠে। এক, টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে। দুই, জনসংখ্যার একটি বড় অংশ আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে উঠলে জনগোষ্ঠীতে তৈরি হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যাকে বলা হয় হার্ড ইমিউনিটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মতো জনবহুল দেশে হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্ব বাস্তবায়িত করতে গেলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে করোনায় আক্রান্ত হতে হবে। কিন্তু তাতে বহু সংখ্যক আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ঝুঁকি মোদী সরকার নিতে চাইছে না। তাই ভ্যাকসিনেই এখন ভরসা সরকারের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গোটা বিশ্বে এখন মানুষের উপর ২৪টি টিকার প্রয়োগ চলছে। এর মধ্যে ব্রিটেন, আমেরিকা ও চিনের তিনটি টিকা রয়েছে মানব প্রয়োগের তৃতীয় বা শেষ ধাপে। ভারতের দু’টি টিকার হিউম্যান ট্রায়াল রয়েছে প্রথম/দ্বিতীয় ধাপে।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হার্ড ইমিউনিটি তত্ত্বের আশা জাগে চলতি সপ্তাহে। যখন মুম্বইয়ের প্রায় সাত হাজার মানুষের উপরে চালানো একটি সমীক্ষায় উঠে আসে, তাঁদের মধ্যে বস্তি এলাকায় বসবাসকারী ৫৭ শতাংশ করোনা আক্রান্ত মানুষের মধ্যে বেশির ভাগেরই কোনও উপসর্গ নেই বা তাঁরা সেরে উঠেছেন। তা হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ১৩৮ কোটির দেশে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের সংক্রমণ হওয়া সময় সাপেক্ষ। এত বড় সংখ্যক রোগীকে সামলানোর মতো স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও নেই। তাই টিকাতেই ভরসা রাখছে সরকার।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর মধ্যে বদলি দুই হাসপাতালে
এ দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এই প্রথম দেশ জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এক দিনে মোট আক্রান্ত ৫২,১২৩ জন। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫,৮৩,৭৯২। তবে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ১৬ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ৫,২৮,২৪২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৭৫ জনের। এই নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪,৯৬৮ জন। সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা ১০ লক্ষের বেশি। মৃতের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৭৭৫ জনের মধ্যে ২৯৮ জন মহারাষ্ট্র থেকে। কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুতে মারা গিয়েছেন যথাক্রমে ৯২ এবং ৮২ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, দেশের ২১টি রাজ্যে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নীচে।
আরও পড়ুন: কোভিড ১৯-এর ধাক্কায় বদলাচ্ছে হাতের লেখার ধরনও
রাজস্থান, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নীচে। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সচিব রাজেশ ভূষণ এ দিনও জানান, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে মনে করছে না সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, করোনায় মৃত দেশের ১৩১ জন চিকিৎসকের পরিবারের থেকে ৫০ লক্ষ টাকা করে বিমার জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২০টি পরিবার বিমার টাকা পেয়ে গিয়েছে। ৬৪টি পরিবারকে দ্রুত বিমার টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। বেশি সংখ্যক আবেদন এসেছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও তেলঙ্গানা থেকে।