Coronavirus in India

Coronavirus in India: ওমিক্রন নয়, এখনও উদ্বেগের কারণ ডেল্টাই

ওমিক্রন প্রজাতির খোঁজ প্রথম পাওয়া গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। তীব্র সংক্রমণ ঘটানোই ওই প্রজাতির মূল বৈশিষ্ট্য।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৪
Share:

ফাইল চিত্র।

করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি ওমিক্রনের সন্ধান ভারতে পাওয়ার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ। আজ রাত পর্যন্ত দেশে ওই প্রজাতিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে গতিতে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে, ভারতে অবশ্য সেই গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। এ দেশে ওমিক্রন আক্রান্তদের মৃদু উপসর্গ থাকায় প্রাথমিক ভাবে যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, তেমনি তাঁদের মতে ভারতে এখনও মূল সংক্রমণ প্রজাতি (ডমিন্যান্ট) হল ডেল্টা। ওমিক্রনকে রোখার সঙ্গেই ডেল্টার সংক্রমণ আটকানো প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা।

Advertisement

ওমিক্রন প্রজাতির খোঁজ প্রথম পাওয়া গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। তীব্র সংক্রমণ ঘটানোই ওই প্রজাতির মূল বৈশিষ্ট্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিকবার চরিত্র পরিবর্তন করা ওমিক্রন প্রজাতি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। ভারতে প্রথম বেঙ্গালুরুতে গত মাসের শেষ সপ্তাহে ওই প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। দেশে এখন পর্যন্ত যে ৩৮ জনের শরীরে ওমিক্রন পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের কারও শরীরে গুরুতর ভাবে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়নি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সংস্থার এপিডিমিয়োলজি অ্যান্ড কমিউনেকেবল ডিজ়িজ় শাখার প্রধান সমীরণ পাণ্ডা বলেন, ‘‘বৈজ্ঞানিক ভাবে দেখা গিয়েছে যে ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি, সেগুলির মারণক্ষমতা কম। কারণ, যে ভাইরাসের মারণক্ষমতা বেশি (যেমন ইবোলা) সেগুলি যদি হোস্ট (এখানে মানবশরীর)-কে মেরে ফেলে তা হলে নতুন মানবশরীরে সেই ভাইরাস ছড়াতে পারে না। তাই দেখা গিয়েছে, যে ভাইরাস বেশি সংক্রামক, সেই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ালেও, তাতে প্রাণহানি কম হয়। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে এর উপসর্গগুলি তত মারাত্মক নয়। ডেল্টা প্রজাতির আক্রমণে যেমন আক্রান্তদের অক্সিজেনজনিত সমস্যা হয়েছিল, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। কিন্তু ওমিক্রনের এ ক্ষেত্রে তেমন গুরুতর উপসর্গের এখনও দেখা পাওয়া যায়নি।’’

একই মত এমসের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জয় রাইয়ের। তাঁর যুক্তি, এ দেশে ওমিক্রনে আক্রান্তেরা গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন এমন তথ্য এখনও নেই। অধিকাংশের মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সকলে নজরদারিতে থাকার পরে সুস্থ হয়ে
গিয়েছেন। রাইয়ের কথায়, ‘‘ওমিক্রনের
চেয়েও এখন দেশে অনেক বেশি হারে ছড়াচ্ছে ডেল্টা প্রজাতি। দিল্লির এমসে এখনও যে সব রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরা ডেল্টা প্রজাতিতে আক্রান্ত হয়েই আসছেন। ভারতে গতকাল যে ৭৭২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের ৯৯ শতাংশই ডেল্টা প্রজাতির শিকার।’’ তৃতীয় ঢেউ আসবে কি আসবে না তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, কিন্তু তা বলে মাস্ক পরা, দূরত্ব বিধি পালন করার মতো কোভিড-বিধি ছেড়ে দেওয়াও উচিত নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, আমজনতাকে কোভিড-বিধি মেনে চলতেই হবে। কারণ মাস্ক পরলে কেবল করোনা নয়, যক্ষ্মা থেকে বায়ু দূষণ— একাধিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

Advertisement

বর্তমানে দেশের যে টিকাগুলি করোনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কতটা কার্যকর তা নিয়ে বলার সময় আসেনি বলেই মত আইসিএমআর কর্তৃপক্ষের। আইসিএমআরের প্রধান বলরাম ভার্গবের কথায়, ‘‘জনসংখ্যার খুব অল্প অংশে ওমিক্রন ছড়িয়েছে। আক্রান্তদের শরীর থেকে ওমিক্রনকে চিহ্নিত করে তা প্রতিষেধকের বিরুদ্ধে কেমন কাজ করছে তা খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। আশা করছি খুব দ্রুত এ বিষয়ে তথ্য জানা যাবে।’’ এ নিয়ে সমীরণ পাণ্ডাও বলেন, ‘‘প্রতিষেধক কাজ করবে কি করবে না, তা না ভেবে আমাদের টিকাকরণ আরও দ্রুত গতিতে চালিয়ে যেতে হবে। যাতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়। টিকা দেওয়া থাকলে অন্তত করোনা আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যায়।’’

দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ় ও অন্তত নব্বই শতাংশ প্রথম ডোজ় পেয়েছেন। দাবি উঠেছে ছোটদের টিকাকরণ শুরু করার ব্যাপারেও। সমীরণের মতে, সেরো সমীক্ষা দেখিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউয়ে ছোটদের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ করোনার শিকার হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু ছোটদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তাই অধিকাংশ নিজে থেকে সুস্থ হয়ে যায়। তাই ছোটদের প্রতিষেধক দিতেই হবে এখনই তা বলার সময় আসেনি। আর বুস্টার ডোজ় দেওয়ার যে দাবি উঠেছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনও সাব-গ্রুপকে (স্বাস্থ্যকর্মী) দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে যত দ্রুত সম্ভব টিকার দু’টি ডোজ়ের আওতায় নিয়ে আসা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement