সেরো-সার্ভের জন্য প্রতি মাসেই দিল্লির বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
আগের থেকে আরও বেশি সংখ্যক দিল্লিবাসীর দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে হওয়া তৃতীয় সেরোলজিক্যাল সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে এ তথ্য।
সরকারি ভাবে সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত না হলেও ওই প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই মুহূর্তে অন্তত ৬৬ লক্ষ দিল্লিবাসীর মধ্যে করোনা-প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি (শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ দিল্লির ২ কোটি বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশই করোনার বিরুদ্ধে সাময়িক ভাবে লড়াইয়ে সক্ষম। তবে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও ঠিক কত দিন তা কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, সে বিষয়ে এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
সেরো-সার্ভের জন্য গত জুন থেকে প্রতি মাসেই দিল্লির কনটেন্টমেন্ট জোনের বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ১০ জুন থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে হওয়া প্রথম সেরো-সার্ভেতে ২৩.৪৮ শতাংশ দিল্লিবাসীর দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এর পরের সার্ভেতে তা বেড়ে হয় ২৯.১ শতাংশ। অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তা আরও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: চিনা নজরদারির তদন্ত-রিপোর্ট ৩০ দিনেই, জানালেন বিদেশমন্ত্রী
দিল্লি প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, সেরো-সার্ভের প্রাথমিক রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরের কাছে জমা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে তা পর্যালোচনার কাজ চলছে। দিল্লির বেশ কিছু ওয়ার্ডের তথ্য ফের খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের ‘বিশ্বকর্মা’ অ্যাখ্যা মোদীর! কিন্তু তাঁদের সমস্যা নিয়ে কি আগ্রহী তিনি
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথম সেরো-সার্ভেতে রক্তের ২১ হাজার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর পরের সমীক্ষা চলে ১৫ হাজার দিল্লিবাসীর মধ্যে। তৃতীয় সমীক্ষায় ১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
কেন করা হচ্ছে এই সার্ভে? ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এপিডেমিওলজি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ললিত কান্ত বলেন, “শহরে বা রাজ্যে কত জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে তা স্পষ্ট ভাবে জানতে সেরো-সার্ভে প্রয়োজন।” ললিতের মতে, করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন, অথচ নিজের অজান্তেই সেরে উঠেছেন, এমন উপসর্গহীন মানুষের সংখ্যা জানা যায় এ ধরনের সমীক্ষা থেকে। তিনি বলেছেন, “সবচেয়ে বড় কথা, উপসর্গহীন মানুষেরা, যাঁরা নিজেরাও জানেন না কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কথা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের চিহ্নিতও করা যায় এই সমীক্ষার মাধ্যমে।”
বিজ্ঞানীদের মতে, যত বেশি সংখ্যক করোনা-আক্রান্তের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই ততই জোরদার হবে। তাঁদের মতে, অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দ্বিতীয় বার সংক্রমণের হাত থেকে সাময়িক ভাবে হলেও রক্ষা করবে। তবে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি থাকলে তবেই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়়ে উঠবে, যা সংক্রমণের হাত থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।