কোভিড সংক্রমণ বাড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থনীতি নিয়েও নতুন করে চিন্তা তৈরি হয়েছে। সেই দুশ্চিন্তা কাটাতে আজ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানাল, অর্থনীতিতে বিপদের এই আশঙ্কার মোকাবিলায় সরকার যথেষ্ট তৈরি। এক দিকে কোভিড পরীক্ষা ও চিকিৎসা পরিকাঠামো এখন আগের তুলনায় অনেক উন্নত। অন্য দিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও অতিমারির সঙ্গে মানিয়ে চলা অভ্যাস করে ফেলেছেন দেশবাসী। কোভিড টিকাকরণের ফলেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে।
নতুন করে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি, বিশেষত মহারাষ্ট্রে আংশিক লকডাউন জারি হওয়ায় অর্থনীতিবিদদের মধ্যে নতুন করে আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখনও কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করেনি। কিন্তু অর্থনীতির ভিত যে এখনও নরম, তা বুঝিয়ে ফেব্রুয়ারিতেই ৮টি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কোচন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এপ্রিল থেকে জুন— এই তিন মাসে আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে। রবিবার যে নতুন ১ লক্ষ সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তার অর্ধেকই মহারাষ্ট্র থেকে। এ দিকে দেশের জিডিপি-র ১৫ শতাংশই আসে মহারাষ্ট্র থেকে। সেই মহারাষ্ট্রেই শপিং মল, রেস্তরাঁয় বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, কোভিড মাথাচাড়া দেওয়ায় হোটেল-রেস্তরাঁ, শপিং মলে যাতায়াত কমতে শুরু করেছে। যদিও বাড়ি থেকে অফিস যাতায়াত কমেনি। কিন্তু পরিবহণ ও হোটেল-রেস্তরাঁ ক্ষেত্র ফের ধাক্কা খেলে তার ছাপ জিডিপি-র উপরেও পড়বে।
এই আশঙ্কা উড়িয়ে আজ অর্থ মন্ত্রকের মাসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভিডের পরীক্ষা, চিকিৎসার পরিকাঠামো, টিকাকরণের সঙ্গে বাজেটে বিপুল পরিমাণে পরিকাঠামো ও মূলধনী খরচে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। ফলে ২০২১-২২ অর্থ বছরের ছবিটা যথেষ্ট উজ্জ্বল হবে। পরিকাঠামোয় খরচের চাকা ইতিমধ্যেই ঘুরতে শুরু করেছে। নতুন অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তার প্রভাব দেখা যাবে। গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিকাঠামো খাতে আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি খরচ হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রকের মাসিক প্রতিবেদন
• কোভিড সংক্রমণে অর্থনীতিতে যে বিপদের শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় সরকার তৈরি
• কোভিড পরীক্ষা ও চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নত। অতিমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মানিয়ে চলা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে
• টিকাকরণে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে
• বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী পরিকাঠামোয় অর্থ খরচ শুরু হয়েছে। অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এর সুফল মিলবে
• রাজকোষের হাল আগের তুলনায় ভাল
সরকারের দাবি, রাজকোষের অবস্থাও এখন তুলনায় ভাল। গত বছরের এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজকোষ ঘাটতি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ শতাংশের মধ্যেই বেঁধে রাখা গিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি আয়কর রিফান্ড দিয়েও কেন্দ্রের নিট রাজস্ব আয় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি হবে।
অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সরকার পাঁচ দফা কৌশল নিচ্ছে। এক, কোভিড পরীক্ষায় বৃদ্ধি। দুই, সংক্রমিতদের বিচ্ছিন্ন করে তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা। তিন, সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানো। চার, কোভিডের দূরত্ব বিধি কার্যকর করা এবং পাঁচ, যে সব জেলায় বেশি কোভিড সংক্রমণ হচ্ছে, সেখানে টিকাকরণ বাড়ানো।