গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে করোনার প্রতিষেধক হাতে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তরফে ইতিমধ্যে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশে প্রতি দিন আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে হু হু করে বেড়ে চলেছে, তাতে কত দিন পর্যন্ত করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমা হচ্ছে চিকিৎসক মহলে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণের নিরিখে এ দিন আগের সব হিসেব ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত। তাতেই দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে এসেছে সব মহলে।
রবিবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে নোভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৯০ হাজার ৬৩২ জন। তাতে সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ লক্ষ ১৩ হাজার ৮১১। এর মধ্যে এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৮ লক্ষ ৬২ হাজার ৩২০।
সক্রিয় আক্রান্তের নিরিখে এই মুহূর্তে বিশ্ব তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৬২ লক্ষ ৪৫ হাজার ১১২ জন মানুষ নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মোটে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ লক্ষ ২৩ হাজার। অর্থাৎ সংক্রমণের নিরিখে এই মুহূর্তে ব্রাজিলের সঙ্গে ভারতের ১০ হাজারেরও কম ফারাক রয়েছে। দেশে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিলকে টপকে ভারত দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: মাদককাণ্ডে এ বার সমন রিয়াকে, আজই হাজিরা দিতে পারেন এনসিবির দফতরে
গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজারের কোটায় ঘোরাফেরা করছে। এ দিনও তা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১ হাজার ৬৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। দেশে সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত নোভেল করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ হাজার ৬২৬ জন মানুষ। মৃত্যুর নিরিখেও বিশ্ব তালিকায় এই মুহূর্তে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। শীর্ষে থাকা আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ২০৩ জন করোনা রোগীর।
প্রতি দিন যত সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে এবং তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা ৭ শতাংশেই বন্দি ছিল। কিন্তু শনিবার তা বেড়ে ৮.১৬ শতাংশ হয়। এ দিন তা আরও বেড়ে ৮.২৯ শতাংশ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৫৪ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। তাতেই দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং সংক্রমণের হারও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান যেমন উদ্বেগ বাড়িয়েছে, তেমনই প্রতি দিন যে হারে মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন, তা কিছুটা হলেও স্বস্তি জোগাচ্ছে সরকারকে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭৩ হাজার ৬৪২ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এক দিনে সুস্থতার নিরিখে এখনও পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৩১ লক্ষ ৮০ হাজার ৮৬৫ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন দেশে। তার ফলে দেশে সুস্থতার হার বেড়ে ৭৭.৩২ শতাংশ হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে দৈনিক আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা বেশি, সেই তুলনায় দেশের সামগ্রিক চিত্রটাকে স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন না চিকিৎসকদের একাংশ।
রাজ্যগুলির মধ্যে এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতিই সবচেয়ে দুশ্চিন্তাজনক। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৮ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৬২ জন মানুষ নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৭৪ জন করোনা রোগী। এখনও পর্যন্ত সেখানে ২৬ হাজার ২৭৬ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। সেখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ৩৩১। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ১০৪ জন করোনা রোগী। মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ জনের। তবে মৃত্যুর নিরিখে অন্ধ্রের চেয়ে তামিলনাড়ুতে মৃতের সংখ্যা বেশি। এখনও পর্যন্ত সেখানে ৭ হাজার ৭৪৮ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানে মোট আক্রান্ত ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬৯৭। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৬৬ জন।
তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে কর্নাটক। সেখানে এখনও পর্যন্ত নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৩২ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লক্ষ ৮৩ হাজার রোগী। প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ২৯৮ জন। তালিকায় পঞ্চম স্থানে থাকা উত্তরপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৭৬৫ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৫৯ করোনা রোগী। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৩ জন রোগীর।
তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা দিল্লিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৯৩। সেখানে এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৭৮৫ জন করোনা রোগী। প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৫৩৮ জন। সপ্তম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭০১। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৮০১ জন। করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৫১০ জন।
তালিকায় অষ্টম, নবম এবং দশম স্থানে রয়েছে বিহার, তেলঙ্গানা এবং অসম। বিহারে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৩২ জন সংক্রমিত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫০৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৭৩৫ জন রোগী। তেলঙ্গানায় সবমিলিয়ে ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৬৯ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৫৩০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ৮৮৬ জনের। অসমে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৯২২। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৫ হাজার ৬৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫২ জন রোগী।
আরও পড়ুন: লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে তিনটি নতুন রানওয়ে তৈরি করছে চিন
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)