ছবি: রয়টার্স।
দেশে করোনাভাইরাসের গোষ্ঠী-সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বরাবরই উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কর্তারা। এ-ও বলেছেন, নেহাত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে না-হলে কারও মাস্ক ব্যবহারের দরকার নেই, বরং পারস্পরিক দূরত্বটা জরুরি। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে আমজনতাকে ঘরের বাইরে গেলেই মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি কী ভাবে বাড়িতে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করা যাবে, কী ভাবে তা ব্যবহার করতে হবে— তা নিয়ে সচিত্র নির্দেশিকাও প্রকাশ করা হল।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ অবশ্য বলেছিল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাল্টানো হতে পারে মাস্ক সংক্রান্ত নীতি। আজ সেই নীতিই কার্যকর হওয়ায় বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, তবে কি সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাই করছে সরকার?
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গোটা দেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ৩০৭২। মৃতের সংখ্যা ৭৫। গত কাল তা ছিল ৬২। সুস্থ হয়েছেন ২১২ জন। আজ সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘গত কাল থেকে নতুন করে ৬০১ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত কাল মারা গিয়েছেন ১২ জন।”
আরও পড়ুন: যুব-মাঝবয়সিরা বেশি বিপদে, দাবি সমীক্ষায়
দেশে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়া ইস্তক ২৪ ঘণ্টায় ছ’শোরও বেশি সংক্রমণ কখনও ছড়ায়নি। সেই প্রেক্ষিতেই সকলকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মেডিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের পুরনো নীতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর্মীরা, বিশেষত যাঁরা করোনা-রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট সুরক্ষা-সরঞ্জামই ব্যবহার করতে হবে। আম নাগরিকদের বলা হয়েছে, যাঁদের শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও অসুস্থতা নেই, তাঁরা বাইরে বেরোনোর সময়ে ঘরে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। আগরওয়াল এই প্রসঙ্গে বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে সুস্থ থাকার জন্যই ঘরে তৈরি মাস্ক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। যাতে কিছুটা হলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়।”
ঘরোয়া মুখোশ
কী দিয়ে
• পরিষ্কার সুতির কাপড় বা রুমাল
• চওড়া অংশ এবং ৪টি ফিতে আলাদা করে কেটে সেলাই করা যেতে পারে
• রুমাল ভাঁজ করে দু'পাশে রবার ব্যান্ড লাগিয়েও তৈরি করা যায়
পরতে হবে
• গরম সাবানজলে কেচে জীবাণুমুক্ত করে, অন্তত ৫ ঘণ্টা শুকিয়ে
• বা গরম নুন-জলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে
• বা কাচার পরে পাঁচ মিনিট ইস্ত্রি করে
পরার সময়ে
• সাবানে হাত ধুয়ে মুখোশ পরতে হবে
• মুখোশে যেন নাক ও মুখ ঢাকা পড়ে
• উল্টো পিঠ ব্যবহার করা যাবে না
• অন্যের মুখোশ পরা যাবে না
• না-কেচে একই মুখোশ দু'বার পরা যাবে না
(স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরামর্শ)
বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, মাস্ক বা গ্লাভসের জোগান যথেষ্ট নয় বলেই ঘরে তৈরি মাস্ক পরার সুপারিশ করছে সরকার। এমনিতেই চিকিৎসাকর্মীরা উপযুক্ত সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবে বিপন্ন বোধ করছেন। খাস দিল্লির হাসপাতালগুলিতে মাস্ক-গ্লাভস বাড়ন্ত বলে আজ সরব হন দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। তিনি বলেন, “যা মাস্ক-গ্লাভস রয়েছে, তাতে খুব বেশি হলে তিন থেকে চার দিন চলবে।”
আজ থেকেই করোনার পরীক্ষা-কিটের রফতানি বন্ধ করেছে কেন্দ্র। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আজ বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে টুইটে প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় গোটা দেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন তিনি। হাসপাতালের পরিস্থিতি, কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাস শিবিরের সংখ্যার হিসেব নেওয়া ছাড়াও রোগের উপরে নজরদারি ও সংক্রমিতদের খোঁজে কী ভাবে পরীক্ষা চলছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও করেছেন। দেশে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ভেন্টিলেটর, মাস্ক বা গ্লাভসের মতো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রয়োজনে তা দ্রুত বিদেশ থেকে আনানোর উপরে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব জানান, কিছু দেশ থেকে মাস্ক-গ্লাভস আনা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে দেশীয় উৎপাদনও। কয়েক কোটি এন-৯৫ মাস্ক ও হাজারের উপরে ভেন্টিলেটর বরাত দেওয়া হয়েছিল। সেগুলি আসতে শুরু করেছে। শীঘ্রই পরিস্থিতি শুধরোবে বলে দাবি করেন তিনি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)