প্রতীকী ছবি।
সারা দেশে গণ্ডিবদ্ধ রাখা সংক্রমিত এলাকা বা কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করছেন এমসের প্রাক্তন ডিরেক্টর মহেশচন্দ্র মিশ্র। তাঁর মতে, রোজ যে হারে দেশে রোগী বাড়ছে, তা কার্যত গোষ্ঠী-সংক্রমণের লক্ষণ— যা রুখতে কন্টেনমেন্ট জ়োনে আরও বেশি করে রক্ত পরীক্ষায় জোর দেওয়া প্রয়োজন। তবে দিল্লিতে দেরিতে হলেও কেন্দ্র সে-দিকে নজর দিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
কেন্দ্র অবশ্য গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হওয়ার তত্ত্ব বারবার উড়িয়ে দিয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডিজি বলরাম ভার্গব দাবি করেছিলেন, দেশে গোষ্ঠী-সংক্রমণের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে মহেশ মিশ্রের যুক্তি, কিছু শহর ও এলাকায় রোজ যত সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে গোষ্ঠী-সংক্রমণ হয়েছে বলেই অনুমান। বর্তমানে জয়পুরের এমজিইউএমএসটি কলেজের উপাচার্য মিশ্রের কথায়, ‘‘যখন সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন ধরে নিতে হয় গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। গোষ্ঠী-সংক্রমণের কারণেই অধিকাংশ কন্টেনমেন্ট জ়োনে এত বেশি সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।’’ সেই কারণেই কন্টেনমেন্ট এলাকায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রত্যেকের রক্ত-পরীক্ষার উপরে জোর দিয়েছেন মিশ্র। তাঁর মতে, এতেই সংক্রমণ রোখা সম্ভব হবে। আর তা না-হলে ঘরে-ঘরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।
আইসিএমআর-এর মতে, দেশের করোনা সংক্রমিতদের ৭০-৮০ শতাংশই উপসর্গহীন। অর্থাৎ এঁরা সংক্রমিত হলেও এঁদের শরীরে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। উপসর্গ না-থাকায় এঁদের থেকে অজান্তে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু মিশ্রের মতে, এই আশঙ্কা অনেকাংশেই অমূলক। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গহীন হলে তাঁর হাঁচি, কাশি বা সর্দি থাকবে না। যার অর্থ, তাঁর থেকে ‘ড্রপলেট’-এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। একমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ খুব কাছ থেকে কথা বললে তবেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বরং মিশ্র মনে করেন, দোকানদার, ট্যাক্সিচালক বা অটোচালকের মতো মানুষেরা ‘সুপার-স্প্রেডার’। এঁরা সারা দিনে বহু মানুষের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের মাধ্যমে অনেক বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তাই দোকানে কম যাওয়া, বা গেলেও দোকান-অটো-ট্যাক্সিতে অ্যাপ-নির্ভর টাকা লেনদেন করতে বলছেন তিনি।
ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরিতে অনেক দেশ এগিয়ে গেলেও আগামী দেড় থেকে দু’বছরের আগে করোনার প্রতিষেধক সকলের জন্য বাজারে আসা মুশকিল। তাই মিশ্রের মতে, করোনা সন্দেহ হলে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হোক। অবস্থার অবনতি হলে বিনা টালবাহানায় রোগীকে দ্রুত প্লাজ়মা দেওয়া হোক। কারণ রোগীর প্রাণ বাঁচানোই এখন সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।