ছবি পিটিআই।
শহরের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে গ্রামীণ ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ। করোনা মোকাবিলায় গ্রামীণ ভারতের পরিকাঠামোগত অভাবের কথা মাথা রেখে টানা ৬-৮ সপ্তাহের লকডাউনের সুপারিশ করলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডিজি বলরাম ভার্গব। দেশের যে জেলা বা এলাকাগুলিতে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশ বা তার বেশি, সেখানেই টানা লকডাউন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, নইলে অতিমারির প্রকোপ আটকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্তার এই বক্তব্য নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চায়নি মোদী সরকার।
করোনার প্রথম ধাক্কার চেয়ে দ্বিতীয় ধাক্কা অনেক বেশি চোখ রাঙালেও, কেবল অর্থনীতির কথা ভেবেই এ যাবৎ সরাসরি লকডাউনের পথে হাঁটতে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিছু দিন আগে এমস-কর্তা রণদীপ গুলেরিয়া লকডাউনের প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন। আজ মুখ খুললেন আইসিএমআর-এর ডিজি নিজেই। সূত্রের মতে, গত এপ্রিল মাসে যে জাতীয় টাস্ক ফোর্স বৈঠকে বসেছিল তারাও দেশের বিস্তীর্ণ অংশে লকডাউন করার সুপারিশ করে। কিন্তু গত বারের লকডাউনে অর্থনীতির সূচক যে গোত্তা খেয়ে পড়েছিল, তার পরে আর নতুন করে সরাসরি লকডাউন ঘোষণার পথে হাঁটতে রাজি নয় নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সরকারের ব্যাখ্যা, অর্থনীতির অবস্থা গত বছরের তুলনায় তুলনামূলক ভাল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদনের তুলনায় কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধি মন্দের ভাল। এই পরিস্থিতিতে বহু শ্রমিক যাঁরা গ্রামে ফিরে গিয়েছেন, তাঁরা ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে ফের লকডাউন
হলে অর্থনীতিতে নতুন করে যে ধাক্কা লাগবে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারের একটি শীর্ষ সূত্রের মতে, সে কারণে সরকার সরাসরি লকডাউনের পথে হাঁটার কথা ভাবছে না। অন্তত সরকারি ভাবে এই মুহূর্তে লকডাউন ঘোষণা করার কথা ভাবা হচ্ছে না। সংক্রমণ রুখতে রাজ্যগুলি যদি স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউন বা কনটেনমেন্ট জ়োন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের জন্য সেই পথ খোলা থাকছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে লকডাউনকে একেবারে শেষ হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
অন্য দিকে, লকডাউন না করে কোভিডে রাশ কী ভাবে টানা যাবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। তেমন হলে তখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের পক্ষে সওয়াল করছেন বলে দেখিয়ে সরকার হাত তুলে নিতে পারে। বলরাম ভার্গবদের মতো বিজ্ঞানীদের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে প্রবল আকার নিয়েছে, তাতে অবিলম্বে বিস্তীর্ণ এলাকায় লকডাউন করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের প্রায় ৭৩৬টি জেলার মধ্যে ৪০৫টি জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। গত কাল স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ২৬টি রাজ্যে সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের বেশি। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গোয়া (৪৯.৬ শতাংশ), পুদুচেরি (৪২.৮ শতাংশ) এবং তৃতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গ (৩৪.৪ শতাংশ)। সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ৬টি রাজ্যে ও ৫ শতাংশের কম সংক্রমণের হার কেবল মাত্র চারটি রাজ্যে।
আজ এ প্রসঙ্গে ভার্গব বলেন, সংক্রমণের হার বেশি রয়েছে এমন জেলাগুলিকে অবশ্যই বন্ধ রাখা উচিত। যদি জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে আসে তবেই তা খুলে দেওয়া উচিত। কিন্তু তা আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের আগে তা হওয়া সম্ভব নয়। রাজধানী দিল্লির প্রসঙ্গ তুলে ভার্গব দাবি করেন, এপ্রিলে এক সময় দিল্লিতে সংক্রমণের হার ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। যা এখন কমে ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও যদি দিল্লির লকডাউন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, তা হলে ফের বিপর্যয় নেমে আসবে।
আজ দেশের উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার মতো একাধিক রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি ও টিকাকরণের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। বৈঠকে বেশ কিছু রাজ্যে কাঙ্ক্ষিত গতিতে টিকাকরণের কাজ এগোচ্ছে না বলে সরব হন তিনি। ওই রাজ্যগুলিতে টিকাকরণের হার বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়ার সওয়াল করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পঞ্জাব, ওড়িশা ও তেলঙ্গানার মতো রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে আজ তাঁর কাছে অতিরিক্তি কেন্দ্রীয় টিকার জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রতিষেধক না পাওয়ায় রাজ্যগুলিতে টিকাকরণের কাজ দেরি হচ্ছে, বহু জেলায় টিকাকরণের কাজ থমকে রয়েছে বলে কেন্দ্রকে অভিযোগ জানায় রাজ্যগুলি।