করোনা আতঙ্ক বাড়ছে ভারতে। ছবি- পিটিআই।
করোনা আতঙ্ক উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে গোটা বিশ্বে। শুক্রবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৮। আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লক্ষের কাছাকাছি। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা ভারতেও। কলকাতায় আরও এক তরুণের শরীরে শুক্রবার নোভেল করোনাভাইরাসের হদিশ মিলেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে, করোনা-আক্রান্ত এক ইটালীয়ের মৃত্যু হয়েছে এ দিন জয়পুরে। এই নিয়ে ভারতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫। আক্রান্তের সংখ্যা আপাতত ২২৩। দিল্লি সরকার জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যে সব শপিং মল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে মুম্বই, পুণে ও নাগপুরে।
কলকাতায় শুক্রবার যে তরুণের শরীরে নোভেল করোনাভাইরাসের হদিশ মিলেছে, তিনি গত ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে ফিরেছিলেন শহরে। তার পর জ্বর এবং সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ায় এত দিন গৃহ পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দু’দিন আগে তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয় নাইসেডে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এন্টেরিক অ্যান্ড কলেরা ডিজিজ)। শুক্রবার তার রিপোর্ট আসার পর জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত। এই মুহূর্তে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, লন্ডনে পাঠরত তাঁর দুই সহপাঠীও করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে এক জন চণ্ডীগড়ে, অন্য জন ছত্তীসগঢ়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে এ দিন পর্যন্ত গৃহ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ১৯ হাজার ৬০২ জন। আর করোনা সন্দেহে গোটা রাজ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৯ জন। তাঁদের মধ্যে ২ জনের রক্তপরীক্ষা ‘পজিটিভ’ হয়েছে। এ ছাড়াও শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যের ২৬টি হাসপাতালে ৩৯৪টি আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে এখনও পর্যন্ত গোটা দেশের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা তুলনায় ভাল হলেও তীব্র আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। গণ পরিবহণেও সেই আতঙ্কের ছবিটা স্পষ্ট ধরা পড়েছে। বহু জায়গাতেই অফিস টাইমে ট্রেন বা বাস ফাঁকা থাকছে। ভিড় কমছে শহরের রাজপথেও।
ও দিকে, আমদাবাদে আরও দু’জন ও বডোডরায় আরও এক জনের রক্তপরীক্ষায় এ দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। গত কাল রাজকোট ও সুরাতেও ফের দু’জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পঞ্জাবে নওয়াশহরে গত কাল ৭২ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। দিল্লি সরকার এ দিন জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যে সব শপিং মল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে মুম্বই, পুণে ও নাগপুরে।
উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুতে নতুন করে কয়েক জন সংক্রামিত হয়েছেন। গোটা দেশে নিরিখে মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। চণ্ডীগড়েও প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছে। করোনা রুখতে জমায়েতে রাশ টানতে চাইছে বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসন। তাই উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ বিভিন্ন রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কাশ্মীরে ট্রেন পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। বন্ধ করা হয়েছে তিরুপতি মন্দিরও।
আরও পড়ুন: কলকাতায় দ্বিতীয় করোনা আক্রান্তের হদিশ, লন্ডনফেরত তরুণের শরীরে কোভিড-১৯
আরও পড়ুন: করোনায় চতুর্থ মৃত্যু দেশে, প্রায় তালাবন্ধ পঞ্জাব
দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। ৫২ জন। এখনও পর্যন্ত দিল্লি, পঞ্জাব, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে এক জন করে মারা গিয়েছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। দেশে আপাতত যে ২২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে, তাঁদের মধ্যে ভারতীয়ের সংখ্যা ১৯১। বিদেশি ৩২ জন।
করোনা-পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইটালিতে। আরও ৪৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে গত কাল। যা এই মুহূর্তে বিশ্বে সর্বাধিক বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে আটকে পড়া প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে বিদেশ মন্ত্রক। ফ্রান্সে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এই নিয়ে ফ্রান্সে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬৪।
আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে ১০ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের এক সদস্যও।
উহানে অবশ্য এই প্রথম নতুন করে কোনও সংক্রমণের খবর নেই বলেই জানিয়েছে চিনা সরকার। তবে বেজিংয়ে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে মালয়েশিয়াতেও। ইতিমধ্যেই দু’সপ্তাহের জন্য ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে পাক সরকার। এই রোগে প্রথম মৃত্যু ঘটেছে মেক্সিকো ও রাশিয়াতেও।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।