National News

গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু? মানতে নারাজ কেন্দ্র

করোনা সংক্রমণের প্রশ্নে ভারত যে ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে’ রয়েছে, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০৩:২৩
Share:

সুনসান মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস। শনিবার। ছবি: এপি।

দেশে নতুন করে করোনা-সংক্রমণ গত কাল ছিল ৫০টি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর হিসেবে আজ রেকর্ড ভেঙে সংখ্যাটা হল ৮৯।

Advertisement

আইসিএমআর বলেছে, দেশ জুড়ে করোনা-সংক্রমণ আজ ৩১৫ ছুঁয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে, সংখ্যাটা ২৮৩। পশ্চিমবঙ্গের চতুর্থ করোনা-রোগীকে ধরলে ২৮৪। এঁদের মধ্যে ২৩ জন সেরে উঠলেও এবং মৃতের সংখ্যা চারে আটকে থাকলেও দুশ্চিন্তা বেড়েছে পুণের এক মহিলার করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ধরনে। বছর চল্লিশের ওই মহিলা বা তাঁর পরিবারের কেউই সাম্প্রতিক অতীতে বিদেশে যাননি। তবে ওই মহিলা গত ৩ মার্চ নবী মুম্বইয়ের ভাসি-র একটি বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি ট্যাক্সিতে মুম্বই যান বলেও খবর। সবই খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। আপাতত তিনি ভেন্টিলেশনে। চেন্নাইয়েও এমন একটি সংক্রমণের খবর মিলেছে।

এই ধাঁচের সংক্রমণের নজির দেখিয়েই কোনও কোনও চিকিৎসকের দাবি, ভারতে করোনার প্রকোপ বিপজ্জনক ‘তৃতীয় পর্যায়ে’ (স্টেজ থ্রি) পৌঁছে গিয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের অর্থ, গোষ্ঠী-সংক্রমণ। গত দু’দিনে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার উদাহরণও দিচ্ছেন এই চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ভারত হয় তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, বা তার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই দাবি উড়িয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘স্টেজ থ্রি-তে কেউ কোন উৎস থেকে সংক্রমিত হলেন, তা জানা যায় না। কিন্তু ভারতে এ যাবৎ যত জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই সংক্রমণের উৎস জানা গিয়েছে। পুণের মহিলা কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা দেখা হচ্ছে। একটি-দু’টি ঘটনা দেখিয়েই গোষ্ঠী-সংক্রমণের দাবি করা যুক্তিসঙ্গত নয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আর্থিক প্যাকেজ দিক কেন্দ্র, চান সনিয়ারা

করোনা সংক্রমণের প্রশ্নে ভারত যে ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে’ রয়েছে, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ব্রেক দ্য চেন’ নীতি মেনে করোনা সংক্রমণকে দ্বিতীয় পর্যায়ে আটকে রাখতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি। গোষ্ঠী-সংক্রমণ হলে বিদেশ থেকে আসা কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি বা রোগীর সংস্পর্শে না-এসেই এক জন সুস্থ মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই ভারতের মতো দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দেশে করোনা সংক্রমণ তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেলে তা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

করোনা-কথা
মোট দিনে নতুন
আক্রান্ত সংক্রমণ
৩১৫ ৮৯

• করোনা পরীক্ষা রাষ্ট্রপতির রামনাথ কোবিন্দের। তাঁর সব অনুষ্ঠান বাতিল।
• গায়িকা কণিকা কপূর করোনা পজ়িটিভ হওয়ায় এবং পার্টিতে তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে সাংসদ দুষ্মন্ত সিংহ রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ায় এই পরীক্ষা। কণিকার বিরুদ্ধে এফআইআর
• সরকারি সংস্থাগুলিকে নির্দেশ: প্রশাসনিক দায়িত্বে নন, অবিলম্বে এমন ৫০% কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করুন
• প্রয়োজন ছাড়া যাত্রা নয়, পরামর্শ রেলের
• ফেরানো হল আমস্টারডাম-দিল্লি বিমানকে

পরীক্ষা কাদের
• বিদেশ সফর করে এসেছেন এবং উপসর্গ (জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট) রয়েছে
• সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন
• যে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপসর্গ রয়েছে
• হাসপাতালে ভর্তি যে রোগীদের জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে
• যাঁদের শরীরে কোনও লক্ষণ নেই কিন্তু
সংক্রমিত রোগীর
সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের ৫ম ও ১৪তম দিনে ওই পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

(আইসিএমআরের নয়া নির্দেশিকা)

তৃতীয় পর্যায় আটকাতে তাই মূলত নতুন সংক্রমণ রোখার উপরে জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের মতে, পরস্পরের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও পরিচ্ছন্ন থাকাই একমাত্র রাস্তা। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, অজান্তে বা জেনেশুনে করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, এমন প্রায় সাত হাজার লোক নজরদারিতে রয়েছেন। তবে সংখ্যাটি ক্রমশ বাড়ছে। হতাশ এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, ‘‘শিক্ষিত ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়েও দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অন্যদের সংক্রমিত করছেন। এতে লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।’’ রেল জানিয়েছে, বেঙ্গালুরু-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে যাচ্ছিলেন হোম-কোয়রান্টিনে থাকা দু’জন। তাঁদের নামিয়ে দিয়ে পুরো কোচ জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। গত ১৩ মার্চ দিল্লি-রামগুন্ডম সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেসের ৮ যাত্রীর শরীরে কোভিড-১৯ পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: করোনায় বিপদে পড়া গরিবদের দেখার ডাক

করোনা-ত্রাস: জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে সংসদে ভবনে। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

মন্ত্রক কর্তাদের মতে, একমাত্র মানুষ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকলেই অনেকাংশে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। কাল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজস্থানে জরুরি পরিষেবা বাদ দিয়ে দোকানপাট থেকে পরিবহণ— সবই বন্ধ থাকবে। কাল ভোর থেকে ২৪ ঘণ্টা তালাবন্ধ থাকবে তেলঙ্গানাও। গুজরাতের আমদাবাদ, সুরাত, বডোদরা, রাজকোটে আগামী বুধবার পর্যন্ত কার্যত ‘লকডাউন’। ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা বিহারে বাস, রেস্তরাঁ, ব্যাঙ্কোয়েট হল বন্ধ থাকছে। গোয়ায় ১৪৪ ধারা। উত্তরপ্রদেশে কাল গণ-পরিবহণ বন্ধ। তবে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, রাজ্যের ১৫ লক্ষ দিনমজুর ও ২০ লক্ষ ৩৭ হাজার রাজমিস্ত্রিকে এক হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হবে।

রাজনৈতিক নেতারা থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, দেশে করোনা-আক্রান্তদের প্রকৃত সংখ্যা চেপে যাচ্ছে সরকার। চিনের মতো এ ক্ষেত্রেও আসল সংখ্যা জানানো হচ্ছে না। অভিযোগ খারিজ করে যুগ্মসচিব বলেন, ‘‘করোনা একটি ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করলে মানুষের ক্ষতি। আক্রান্তের সংখ্যা লুকোনোর প্রশ্নই নেই।’’ সরকারি সূত্রের খবর, ভারতীয় গাইড-সহ ইটালির পর্যটকদের ১৫ জনের যে দলটি করোনা-সংক্রমিত হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ১৩ জনের শরীরে আর করোনার লক্ষণ মেলেনি। এঁরা ১৬ দিন আইসোলেশনে ছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement