Coronavirus in India

কোভ্যাক্সিন নিয়ে ফুরফুরে টিঙ্কু

টিঙ্কু একা নন। এমসের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী ছাড়াও অন্তত জনা দশেক নিরাপত্তাকর্মীকে আজ টিকা দেওয়া হয়।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:১৬
Share:

ছবি: পিটিআই।

‘‘বাবুজি টিকা লে লি। কোই দিক্কত নেইখে বা।”

Advertisement

এমসের নিউ ওপিডি কেন্দ্রের আটতলার টিকাকেন্দ্র থেকে নীচে নেমে এসে তিরিশ সেকেন্ডের কথোপকথন শেষ করে রীতিমতো বিজয়ীর হাসি বিহারের মুঙ্গের জেলার টিঙ্কু কুমারের। এমসের বেসরকারি ওই নিরাপত্তাকর্মীকে প্রশ্ন করলাম, কাকে ফোন করলেন বাবাকে? হেসে টিঙ্কু বলেন, ‘‘না শ্বশুরমশাইকে। আসলে আমার শ্বশুর গ্রামের ডাক্তার। গত কয়েক দিন ধরে প্রতিষেধক নেওয়া নিয়ে অনেকে ভয় দেখাচ্ছিল। তাই শ্বশুরমশাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম প্রতিষেধক নেব কি না? তিনি আশ্বাস দিয়ে বললেন, ভয়ের কিছু নেই। নিয়ে নাও। তাই টিকা নিয়েই প্রথমে ওঁকেই ফোন করলাম।’’

টিঙ্কু একা নন। এমসের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী ছাড়াও অন্তত জনা দশেক নিরাপত্তাকর্মীকে আজ টিকা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে টিঙ্কুর নম্বর ছিল ৩০-এ। দু’দিন আগে তাঁকে জানানো হয়, প্রথম দিন টিকা পাবেন তিনি। সেই মতো মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল তাঁকে। আজ ০.৫ মিলিলিটার কোভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়েছে তাঁর শরীরে। বলা হয়েছে, ঠিক এক মাস পরে আবার দ্বিতীয় ডোজ় নিতে হবে। কিন্তু গণটিকাকরণ অভিযানে কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের ব্যবহার ঘিরে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা ছুঁয়ে গিয়েছেন টিঙ্কু ও তাঁর স্ত্রী-কেও। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন-এই দুইয়ের গুণগত পার্থক্য রয়েছে কি-না সেই বিতর্কে না ঢুকলেও, প্রতিষেধক নিলে ক্ষতি হতে পারে, সেই আশঙ্কা ছুঁয়ে গিয়েছিল টিঙ্কুর স্ত্রী-কেও। বছর তিনেক এমসের নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব থাকা টিঙ্কুর কথায়, ‘‘আমি তো এমসে কাজ করি। তাই ভয় ছিল না। জানি কিছু হলে চিকিৎসকেরা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আমার স্ত্রী কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তাই বাবার শরণাপন্ন হয় মেয়ে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: কোভ্যাক্সিনে অসুস্থ হলে ক্ষতিপূরণ দেবে বায়োটেক

আরও পড়ুন: লড়াই জোরদার হবে, ভ্যাকসিন নিয়ে শপথ নার্সের

তবে আজ প্রতিষেধক নেওয়ার পরে ফুরফুরে মেজাজ টিঙ্কুর। প্রতিষেধক নেওয়ার পরে শারীরিক কোনও সমস্যা হয়নি বলেই দাবি তাঁর। টিঙ্কু বলেন, ‘‘টিকা নেওয়ার পরে আধ ঘণ্ট বিশ্রাম নিলাম। চিকিৎসকেরা একটি কাগজ ও ফোন নম্বর দিয়েছেন। সমস্যা হলেই ফোন করতে বলেছেন।”

আজ সকালে এমসে টিকাকরণ অভিযানের সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। প্রথম টিকা নেন এমসের সাফাইকর্মী মণীশ কুমার। তার পরে টিকা নিতে দেখা যায় এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়াকে। দিল্লির অন্যান্য কেন্দ্রীয় হাসপাতালের মতো এমসে কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছে। এই এমসে মাস চারেক আগে কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। যা এখনও চালু রয়েছে। ওই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ যার তত্ত্বাবধানে চলছে সেই কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জয় রাই জানান, ‘‘এই হাসপাতালে কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। যাঁদের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের কারও সেই অর্থে কোনও বড় মাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তাই জোর দিয়ে বলতে পারি ওই প্রতিষেধক যথেষ্ট কার্যকর। আজও দুপুর পর্যন্ত যাঁদের দেওয়া হয়েছে তাঁদের কারও সমস্যা হয়নি।’’ আজ প্রথম দিনে একশো জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও পরে ধাপে ধাপে হাসপাতালের মোট ২২ হাজার কর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।

তবে এমসে কেন কোভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হচ্ছে, কোভিশিল্ড নয়, এই বিতর্কে ঢুকতে চাননি সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় কোন প্রতিষেধক যাবে সেই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। এতে হাসপাতালের কিছু করার নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement