চলছে জীবাণুমুক্ত করার কাজ।—ছবি পিটিআই।
করোনা-আক্রান্ত দেশে সফরের রেকর্ড না-থাকলে উপসর্গ দেখেও করোনা পরীক্ষা করছে না দিল্লির হাসপাতালগুলো। আর এর ফলেই প্রশ্ন উঠেছে, সরকার করোনা আক্রান্তের যে সংখ্যা দেখাচ্ছে, প্রকৃত আক্রান্ত তার চেয়ে অনেক বেশি নয় তো?
হাসপাতাল সূত্রে বলা হচ্ছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) করোনা পরীক্ষার যে নির্দেশনামা দিয়েছে, তাতেই বলা হয়েছে— করোনা-উপদ্রুত দেশ ঘুরে না-এলে এবং কোনও করোনা আক্রান্তের সরাসরি সংস্পর্শে না-এলে কারও করোনা পরীক্ষা করার দরকার নেই। দিল্লিতে অনেকেরই অভিযোগ, সর্দি-কাশি, গলায় ব্যথাকে করোনার প্রাথমিক উপসর্গ বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকেরা সাধারণ কিছু পরীক্ষা করে ছেড়ে দিচ্ছেন। করোনার পরীক্ষাই করা হচ্ছে না। এক জন জানিয়েছেন, সর্দি-কাশি নিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে ঘুরেছেন। সবাই তাঁকে বলেছেন, করোনা পরীক্ষা করাতে চাইলে তাঁকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে যেতে হবে। এর পরে তিনি সেখানে গেলে কিছু কথাবার্তা বলে করোনার পরীক্ষা না-করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
আপাতত একশোর বেশি করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে দেশে, প্রায় ১২০ কোটির জনসংখ্যায় যা অতি সামান্য। কিন্তু সরকার যে ভাবে পরীক্ষা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে, তাতে এই সংখ্যাটির বাস্তবতা নিয়ে কি প্রশ্ন উঠছে না? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব সঞ্জীব কুমার এই অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করছেন, করোনা পরীক্ষার জন্য সরকার একটিও পয়সা নিচ্ছে না। এমন নয় যে ঢালাও পরীক্ষার পরিকাঠামো নেই। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত মোট ক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশই ব্যবহার করছে সরকার। সংক্রমণ আরও ছড়ালে তার মোকাবিলায় ভারত তৈরি। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আমরা ৮০ লক্ষ মুখোশ ও সাধারণ সংক্রমণ প্রতিরোধী সামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছি।’’ সচিব জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১০ হাজার পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থা এখন আছে। আপাতত এক লক্ষ কিট মজুত আছে সরকারের কাছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই বাছাই করে পরীক্ষার নীতির সমালোচনা করছেন। একটি বেসরকারি নজরদারি সংস্থার ডিরেক্টর রামানন লক্ষীনারায়ণ বলেন, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়া মডেল মেনে চলে অনেক দেশই সংক্রমণ রোধে সাফল্য পেয়েছে। সেই মডেলে সন্দেহ হলেই পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে নিজের সংক্রমণের কথা জেনে ঘরবন্দি হয়ে তা সারিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন রোগী। সামজে সংক্রমণ ছড়ানোটাও আটকায়।’’ তাঁর কথায়, পরীক্ষা না-হলে কেউ আক্রান্ত হয়েও সেটা জানতে পারছেন না। আর সমাজে অন্যদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে চলেছেন। একটা সময়ে এটা মারাত্মক আকার নিতে পারে।