নিম্নমানের বা নকল এন-৯৫ মাস্ক বাজারে ছেয়ে গিয়েছে।
ভাল্ভ রয়েছে, এমন এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার না-করার পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
নোভেল করোনাভাইরাস বাতাস-বাহিত হয়ে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম বলে সম্প্রতি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তার ভিত্তিতেই এই পরামর্শ। শ্বাস নেওয়ার সুবিধের জন্য অনেক মাস্কের সামনে যে সাদা ছিপির মতো অংশটি থাকে, সেটিই ভাল্ভ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভাল্ভের ফিল্টার বাইরে থেকে বাতাস-বাহিত ভাইরাস ঢোকা আটকে দেয়। কিন্তু মাস্ক-পরিহিত ব্যক্তি নিজেই সংক্রমিত হলে তাঁর নাক-মুখের ভাইরাস ভাল্ভের মধ্য দিয়ে বেরোতে পারে। এই যুক্তিতে কেন্দ্রীয় কর্তারা মনে করছেন, বদ্ধ ঘরে বা কর্মস্থলে ভাল্ভ-যুক্ত এন-৯৫ মাস্কের ব্যবহারে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই প্রয়োজনে ঘরে তৈরি ও ভাল্ভ-বিহীন মাস্ক ব্যবহারে জোর দিয়েছে সরকার।
গত কাল সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দেন ডিরেক্টর জেনারেল অব হেল্থ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) রাজীব গর্গ। চিঠিতে তিনি স্পষ্ট জানান, এন-৯৫ মাস্কের ভাল্ভ রেসপিরেটর নাক ও মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ভাইরাসকে সম্পূর্ণ রুখতে অক্ষম। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) রাজেশ ভূষণ বলেন, ‘‘ধরা যাক, উপসর্গহীন সংক্রমিত ব্যক্তি ভাল্ভ-যুক্ত মাস্ক পরে কোনও ঘরে বসে আছেন এবং নিজের সংক্রমণের কথা তিনি জানেন না। ফলে তাঁর নিঃশ্বাসের সঙ্গে অজান্তেই ভাল্ভের ফাঁকা অংশ দিয়ে ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে আশেপাশে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সংক্রমিত হতে পারেন।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, হু ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, বাতাসের মাধ্যমে করোনা-সংক্রমণের কিছু খবর তারা পেয়েছে।
আরও পড়ুন: পুরনো রূপেই ফিরল নতুন পর্বের লকডাউনের নিয়ন্ত্রণবিধি
স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, নিম্নমানের বা নকল এন-৯৫ মাস্ক বাজারে ছেয়ে গিয়েছে। যা সংক্রমণ রোখার বদলে ছড়াচ্ছে বেশি। এন-৯৫ মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে নানা কথা শুনে সাধারণ মানুষও এই মাস্ক বেশি করে কিনছেন। কিন্তু তার ফায়দা নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাই নকল মাস্কের ব্যবহার রোখাও কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ। চিকিৎসা-সামগ্রীর রফতানি নীতিতে আজ কিছু বদল আনা হলেও নন-মেডিক্যাল বা নন-সার্জিক্যাল ছাড়া সমস্ত মাস্কের রফতানি নিষিদ্ধই রেখেছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: ৬ মাসে দিল্লিতে করোনা আক্রান্ত ৪৭ লক্ষ! বলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সমীক্ষা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকে এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহারের পরে তা জল দিয়ে ধুচ্ছেন। কিন্তু ভাল্ভ-যুক্ত মাস্ক এক বার ধুয়ে ফেলার পরে সেটির কার্যকারিতা আর থাকে না। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদকুমার পলের কথায়, ‘‘নাক-মুখ ঢাকা যায়, এমন মাস্ক পরতে অনুরোধ করা হচ্ছে দেশবাসীকে।’’ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কী ভাবে বাড়িতেই কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করা যায়, তার সবিস্তার বিবরণ তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। তবে মাস্ক বানানোর আগে কাপড়টিকে ভাল করে গরম জলে ধুতে হবে। পুনর্ব্যবহার করতে হলে প্রতি বার গরম জলে নুন ফেলে মাস্কটিকে ফুটিয়ে নিতে হবে। মাস্কে যেন কোনও ছিদ্র না-থাকে। থাকলে দ্রুত সেই মাস্ক বাতিল করে দিতে হবে।