ছবি: পিটিআই।
রাত পোহালেই কার্ফু। করোনা সংক্রমণ রুখতে আগামিকাল গোটা দেশ জুড়ে সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা পালন হতে চলেছে জনতা কার্ফু।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশবাসীর কাছে সময় চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথম পর্যায়ে ১৪ ঘণ্টা। গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দিতে জনতার কাছে স্বেচ্ছায় ঘর বন্দি থাকার আবেদন জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করতেই মানুষের স্বার্থে ওই জনতা কার্ফু ডাকা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনতা কার্ফুর সিদ্ধান্ত একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। অনেকের মতে, এই সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। স্বাস্থ্য কর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই প্রয়োগের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে আরও বড় মাপের লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে সরকার। কাল তারই জল মাপা হবে। জনতা কার্ফু প্রসঙ্গে আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সতর্ক থাকুন। আতঙ্কিত নয়। বাড়িতে থাকাই কেবল গুরুত্বপূর্ণ নয়, আপনি যে শহরে রয়েছেন সেখানেই থাকুন। অহেতুক সফরে আপনার বা অন্যদের কারও লাভ হবে না। এই সময়ে আমাদের প্রতিটি ছোট পদক্ষেপও বড় মাপের প্রভাব ফেলতে পারে।’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, যে গতিতে ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে, তাতে সংক্রমণের জাল ছিন্ন করাটাই এখন সরকারের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আর তা কার্যকর করতে গেলে এ ভাবে ‘লকডাউন’ করা ছাড়া কোনও উপায় খোলা নেই বলেই মত স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশের। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লভ আগরওয়াল বলেন, ‘‘জনতা কার্ফুকে সতকর্তামূলক পদক্ষেপ হিসাবে দেখা উচিত। বাড়িতে থাকলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো অনেকটাই আটকানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে নতুন করে সংক্রমণ রোখাটাই চ্যালেঞ্জ।’’
আজ চলবে এবং চলবে না
রেল
• পূর্ব, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সব দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল
• পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল
• পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনে ৩৪১টি লোকাল ট্রেন চলবে
• পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে ৫০০টি
ট্রেন চলবে
• দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ৩২টি লোকাল ট্রেন চলবে
• মেট্রো দিনে ৫৪টি
• ইস্ট-ওয়েস্ট দিনে ৩৪টি
বাস
• বেসরকারি বাস-মিনিবাস কম চলবে
• যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী সরকারি বাস চলবে
ট্যাক্সি
• বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ১০০০ ট্যাক্সি পথে থাকবে
বিমান
• ইন্ডিগোর ৫০টি উড়ান, অন্য সংস্থার গড়ে ৪-৫টি বিমান বাতিল
বন্ধ থাকছে*
• রেস্তরাঁ, পানশালা, বিনোদন ক্লাব, নাইট ক্লাব, বিনোদন পার্ক, হুক্কা বার, ম্যাসাজ পার্লার, জাদুঘর, চিড়িয়াখানা
• আন্তর্জাতিক উড়ান নিষিদ্ধ ২৮ মার্চ পর্যন্ত
* ৩১ মার্চ পর্যন্ত
তবে সে ক্ষেত্রে রবিবারে ১৪ ঘণ্টা যথেষ্ট নয় বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অনেকেরই মতে, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ যেমন টানা লকডাউনের পথে হেঁটে সাফল্য পেয়েছে, সে পথই নিতে হবে ভারতকে। দরকারে পরপর কয়েক দিন ধারাবাহিক লকডাউনের পথে হাঁটতে হবে ভারতকে। দেশ যে আগামী দিনে সেই পথে হাঁটতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন আইসিএমআরের পদস্থ কর্তা রমন গঙ্গাখেদকর। তাঁর কথায়, ‘‘আগামিকালের জনতা কার্ফুর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। বোঝা যাবে, কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে। কোন ক্ষেত্রে আরও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন।’’ স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, ভবিষ্যতে এক সঙ্গে পরপর টানা কয়েক দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত কালকের পরে নেওয়া হতে পারে। কারণ ভারতের মতো জনঘনত্বের দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন না হলে ওই সংক্রমণ কখনই এড়ানো সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু? মানতে নারাজ কেন্দ্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা ওই লকডাউনের সিদ্ধান্তকে বিজেপি শাসিত রাজ্য ছাড়াও সমর্থন জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, পঞ্জাবের অমরেন্দ্র সিংহ বা বিহারের নীতীশ কুমারেরা। আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, দিল্লি সরকার কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। রবিবার যারা জরুরি কারণে বাড়ির বাইরে বেরোবেন, তাঁদের কথা ভেবে কিছু বাস চালানো হবে। তবে
অধিকাংশ ট্যাক্সি ও অটো ইউনিয়ন আগামিকালের কার্ফুকে সমর্থন করেছে। বিহারে আগামিকাল বাস পরিষেবা বন্ধ থাকছে।
ওড়িশা সরকার আগামী এক সপ্তাহ রাজ্যের পাঁচটি জেলা ও আটটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছে। রেল সূত্রেও বলা হয়েছে, কলকাতা, চেন্নাই বা মুম্বই শহরে কাল সামান্য সংখ্যায় লোকাল ট্রেন চলবে। তবে দূরপাল্লার যে ট্রেনগুলি ইতিমধ্যেই যাত্রা শুরু করে দিয়েছে, তারা অবশ্য রবিবারেও যাত্রা বজায় রাখবে। দিল্লিতে বন্ধ থাকবে মেট্রো পরিষেবা। গো এয়ার, ভিস্তারার মতো বিমান সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, রবিবার খুব সামান্য সংখ্যায় বিমান চালাবে তারা। সর্বভারতীয় ব্যবসায়ী সংগঠন আজ থেকে তিন দিন গোটা দেশে ব্যবসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্ধ থাকছে দিল্লির পাইকারি বাজারও।
জনতা কার্ফুর কথা মাথায় রেখে রবিবারের সমস্ত ধর্মীয় জমায়েত বাতিল করা হয়েছে। গোয়ার বিজেপি সরকার ইতিমধ্যেই সে রাজ্যে যে কোনও জমায়েত রুখতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। দিল্লির একাধিক চার্চ রবিবারের উপাসনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে রবিবার বন্ধ থাকছে দেওবন্দের দারুল উলেমা। জম্মু-কাশ্মীরের ওয়াকফ বোর্ড উপত্যকার সমস্ত মসজিদে ও মাদ্রাসায় কাল নামাজ পড়া বাতিল করেছে। দিল্লি-সহ গোটা দেশে বন্ধ থাকছে ছোট-বড় গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলি।