এই গাড়িতেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
রাজ্যের কোথাও অক্সিজেনে ঘাটতি নেই, পর্যাপ্ত শয্যাও রয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অব্যবস্থা নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগের মধ্যেও এমনটাই দাবি করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ততই যোগীরাজ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থার করুণ চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে এ বার নয়ডায় পার্কিং লটে মৃত্যু হল কোভিড আক্রান্ত এক মহিলার।
বৃহস্পতিবার গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর পার্কিং লটে এই ঘটনা ঘটেছে। মৃত মহিলার নাম জাগৃতি গুপ্ত। আদতে মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা জাগৃতি গ্রেটার নয়ডায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্বামী মধ্যপ্রদেশেই ছিলেন। নয়ডায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি।
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হন জাগৃতি। তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির মালিকই তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। সেই অবস্থায় তাঁকে গাড়িতে বসিয়ে হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করতে যান ওই ব্যক্তি। কিন্তু ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছোটাছুটি করেও শয্যা পাওয়া যায়নি।
দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ রিসেপশন থেকে গাড়িতে জাগৃতিকে দেখতে আসেন ওই ব্যক্তি। সেখানে আসনের উপর জাগৃতিকে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ফের রিসেপশনে ছুটে যান ওই ব্যক্তি। হাসপাতালের কয়েক জন কর্মী তাঁর সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁরাই জাগৃতিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে উত্তরপ্রদেশের সর্বত্রই একই চিত্র ধরা পড়ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, শয্যা এবং অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতাল থেকে রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবার পরিজনরা। কোন হাসপাতালে কত শয্যা রয়েছে, সহজেই যাতে তা জানতে পারেন মানুষ, তার জন্য নয়ডা প্রশাসনের তরফে সম্প্রতি অনলাইন ‘শয্যা ট্র্যাকার’ চালু করা হয়।
বলা হয়, অক্সিজেন এবং আইসিইউ শয্যা মিলিয়ে এই মুহূর্তে ২ হাজার ৫৬৮টি শয্যা খালি রয়েছে। বুকিংয়ের জন্য একটি আপৎকালীন নম্বরও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে ওই নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, নয়ডা এবং গ্রেটার নয়ডার কোথাও কোনও শয্যা খালি নেই। কত ক্ষণ পর শয্যা পাওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে বলা হয়, পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রায় এক সপ্তাহ ৩ লক্ষের উপরে ঘোরাফেরার পর এই মুহূর্তে দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ৪ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নয়ডায় এই মুহূর্তে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ২০০। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২১২ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।