আমেরিকা বা ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় ভারতে করোনায় মৃতের সংখ্যা বরাবরই কম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জুলাইয়ের পর থেকে এই প্রথম দেশে করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা সর্বনিম্ন হল। সেই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যাও ৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে দেশ জুড়ে সংক্রমিতের সংখ্যা পার করল ৭৯ লক্ষের কোঠা। সেই সঙ্গে বেড়েছে সুস্থ রোগীর সংখ্যাও।
সোমবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশ জুড়ে ৪৮০ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত তিন মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে কম। ১০ জুলাই দেশে ৪৭৫ জন সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছিল। ফলে সে দিনের পর থেকে এই প্রথম তা সবচেয়ে কমল।
করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা স্বস্তি দিলেও আশঙ্কা জাগাচ্ছে সংক্রমণের হার। রবিবারের থেকে এ দিন তা আরও বেড়ে হয়েছে ৪.৯১ শতাংশ। প্রতি দিন যত সংখ্যক মানুষের কোভিড টেস্ট করা হয়, তার মধ্যে যত শতাংশের টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ, তাকেই পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলে। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততটাই স্বস্তিদায়ক। এ দিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন জানিয়েছে, দেশ জুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ৩০৯ জনের কোভিড টেস্ট করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪৫ হাজার ১৪৮ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ল সংক্রমণের হার, প্রতিমা নিরঞ্জন ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ
আরও পড়ুন: বেষ্টনীর বাইরেই নবমীর জনস্রোত
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
বিশ্ব জুড়ে করোনা আক্রান্তের তালিকায় গোড়া থেকেই শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। গত ২ দিন ধরেই আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সে দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৬৮৩ জন। সব মিলিয়ে আমেরিকায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭৫২। অন্য দিকে, তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ লক্ষ ৯ হাজার ৯৫৯ জন। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে এক দিনে ১৭ হাজার ৪৯৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত সে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৩৩ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আমেরিকা বা ইউরোপীয় দেশগুলির থেকে ভারতে করোনায় মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বরাবরই কম। তবে সব মিলিয়ে এ দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা পার করেছে ১ লক্ষের কোঠা। এ দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত দেশ জুড়ে ১ লক্ষ ৯ হাজার ১৪ জন সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯ লক্ষের কোঠা পার করলেও সেরে উঠেছেন ৭১ লক্ষ ৩৭ হাজার ২২৮ জন। ফলে এই মুহূর্তে দেশে সংক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ৫৩ হাজার ৭১৭।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সুস্থতার হারেও এ দিন উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, এ দিন তা দাঁড়িয়েছে ৯০.২৩ শতাংশে। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
দেশে করোনা আক্রান্তের তালিকায় গোড়া থেকে শীর্ষ ছিল মহারাষ্ট্র। এ দিনও তার হেরফের ঘটেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৬৯ জনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ ঘটেছে। সব মিলিয়ে ওই রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ২০। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ১ জন এখনও করোনায় আক্রান্ত। বাকি ১৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৭৫৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ (২,৯৯৭ জন), কর্নাটক (৪,৪৩৯ জন) এবং তামিলনাড়ু (২,৮৬৯ জন)-তেও দৈনিক সংক্রমণের মাত্রা উদ্বেগজনক। এ ছ়াড়া, পশ্চিমবঙ্গেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। এ রাজ্যে ২০ অক্টোবর থেকে প্রতি দিনই দৈনিক ৪ হাজারের বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)