Coronavirus in India

টেস্ট বাড়লেও সংক্রমণ কম নবীনের রাজ্যে

পড়শি রাজ্যে সংক্রমণ বা মৃত্যুর সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বরাবরই অনেক কম। কিন্তু জুলাইয়ের শেষ বা অগস্টের গোড়ায় সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করে তেড়েফুঁড়েই।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০৪:১২
Share:

ছবি: পিটিআই।

ছবিটা পাল্টে গিয়েছে আচমকাই। কোভিড-যুদ্ধের গোড়ায় সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রশংসা কুড়োলেও নবীন পট্টনায়কের সরকারের জন্য সঙ্কেতটা ভাল ছিল না এ মাসের গোড়াতেও।

Advertisement

পড়শি রাজ্যে সংক্রমণ বা মৃত্যুর সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বরাবরই অনেক কম। কিন্তু জুলাইয়ের শেষ বা অগস্টের গোড়ায় সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করে তেড়েফুঁড়েই। জনসংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেক সাড়ে চার কোটিরও কম লোকের রাজ্য ওড়িশায় টেস্টের সংখ্যা তখনও তুলনায় কম। ২০-২২ দিন আগে বাংলায় যখন রোজ ১৩-১৪ হাজার টেস্ট, ওড়িশায় সংখ্যাটা মেরেকেটে ৮-৯ হাজার। গত দু’-তিন দিনে সেই ওড়িশাই বাংলাকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলার টেস্টসংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। সেখানে ওড়িশা গত ১১ ও ১২ অগস্ট যথাক্রমে ৩২০৫৩ এবং ৪০৭১১টি টেস্ট করিয়ে ফেলেছে। তাতে পজ়িটিভের হারও অনেকটাই কম। দেখা গিয়েছে ১১ তারিখ ৩২০৫৩ জনের মধ্যে ১৮৭৬ জন কোভিড পজ়িটিভ। বুধবার (১২ অগস্ট) ৪০৭১১ জনের মধ্যে ১৯৮১ জন পজ়িটিভ। এই শেষ দিনের নথিমাফিক সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশেরও নীচে নামে। ২৭-২৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা করিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার এক-এক দিনে প্রায় তিন হাজার ছুঁয়ে ফেলেছে।

অথচ গত ১ অগস্ট পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। ওড়িশার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেদিনও ১৪৬০৮টি নমুনা পরীক্ষা করিয়ে দেখা যায় তখন ১৪৩৪ জন কোভিড পজ়িটিভ হয়েছেন। সংক্রমণের হার দশ শতাংশ ছুঁই ছুঁই। কর্নাটক, তামিলনাডুর মতো নানা রাজ্যেই টেস্টের সঙ্গে সংক্রমণের হার বাড়লেও ওড়িশায় ছবিটা আলাদা।

Advertisement

আরও পড়ুন: পুরনো গতিতেই ফের রেকর্ড সংক্রমণ দেশে

কী ভাবে এটা সম্ভব হল? ওড়িশার কোভিডপ্রবণতা বিশ্লেষণে যুক্ত ভুবনেশ্বরের ইনস্টিটিউট অব লাইফসায়েন্সেসের অধিকর্তা অজয় পরিদা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এটা শৃঙ্খলা, সচেতনতার সুফল। জুলাইয়ের শেষ ১৫ দিন কোভিড-প্রবণ জেলা গঞ্জাম, খোরদা (ভুবনেশ্বর), কটক, জাজপুর এবং সুন্দরগড়ের রউরকেলায় লকডাউন কাজে এসেছে। এখনও মাস্ক বা দূরত্ববিধি মেনে চলা, ছোট ছোট কনটেনমেন্ট জোন তৈরি ছাড়া শনি, রবি লকডাউন চলছে।’’ গঞ্জামের খাল্লিকোটের বাসিন্দা, এনজিও কর্মী অশোক বেহেরাও বলছেন, ‘‘সামান্য উপসর্গ বা সন্দেহ থাকলেও এখন গৃহবন্দিত্ব বা নিভৃতবাস কড়া ভাবে চাপানো হচ্ছে। বাজারগুলোয় না-ছুঁয়ে ছোট ছোট প্যাকেটবন্দি আনাজ বিক্রি চলছে।’’

উৎকলে করোনা
১ অগস্ট
• ১৪৬০৮টি টেস্ট
• ১৪৩৪টি পজ়িটিভ (৯.৮%)

১২ অগস্ট
• ৪০৭১১টি টেস্ট
• ১৯৮১টি পজ়িটিভ (৪.৮%)

ওড়িশায় ৩১৪ জন মৃতের ১৪৭ জনই গঞ্জামের। কিন্তু সেই সংখ্যাটাও ইদানীং কমে তিন-চার জন। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সুরেশ মহাপাত্রের কথায়, ‘‘২০-২২ দিন আগে ৭০০-৮০০ জনের টেস্ট করিয়ে গঞ্জামে ৭০-৮০% পজিটিভ হচ্ছিলেন। এখন সেটা ৭-৮ শতাংশে নেমে এসেছে।’’

সুরেশবাবু বলছেন, রোজ ৩০ হাজার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে ৫৫টি ল্যাবরেটরিতে ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। বুধবার রিভিউ মিটিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক অচিরে রোজ ৫০ হাজার টেস্ট করানোয় জোর দিয়েছেন। সেই সঙ্গে উৎকলে ২২-২৩ টি বেসরকারি হাসপাতালে পুরোপুরি কোভিড চিকিৎসা করিয়ে উৎকল সরকার তার খরচ বইছে বলেও সুরেশ জানান।

তুলনায় এখনও আরটিপিসিআর টেস্ট বেশি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরাও পরিকাঠামো অনুযায়ী সর্বতো ভাবে চেষ্টা করছি। অ্যান্টিজেন টেস্টে ১৫ মিনিটে ফল মেলে। কার্যকারিতার হার ৬০-৮০%। আরটিপিসিআর টেস্টের কার্যকারিতা ৬৭%। কিছু উপসর্গ থাকলেও অ্যান্টিজেন টেস্টে নেগেটিভ এলে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করতে বলেছে আইসিএমআর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement