ছবি: সংগৃহীত।
আক্ষরিক অর্থে জোড়া উপহার!
গত কাল ছাড়পত্র পেয়েছিল কোভিশিল্ড প্রতিষেধক। আর আজ বছরের দ্বিতীয় দিনেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের প্রশ্নে ছাড়পত্র পেল ভারতীয় সংস্থা, হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক-এর তৈরি কোভ্যাক্সিন। গত কালের মতো আজও দীর্ঘ বৈঠকের পরে কোভ্যাক্সিন ব্যবহারের প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত দেয় বিশেষজ্ঞ কমিটি।
বছরের প্রথম দু’দিনেই দু’টি প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দিয়ে কেন্দ্র বুঝিয়ে দিল দ্রুত গণটিকাকরণ অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ার নীতি নিয়েই এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারত বায়োটেক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর তৈরি স্বদেশি ওই টিকার ছাড়পত্র পাওয়া কার্যত প্রধানমন্ত্রী মোদীর আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ডাককে শক্তিশালী করল বলে দাবি করছেন বিজেপি নেতারা।
দেশজ টিকা
• পরিচয়: কোভ্যাক্সিন। সম্পূর্ণ ভাবে দেশে তৈরি সম্ভাব্য কোভিড টিকা
• তৈরি করেছে: হায়দরাবাদের টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘ভারত বায়োটেক’ ও সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি)
• কী ধরনের টিকা: ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন’
• যে পদ্ধতিতে তৈরি: উপসর্গহীন এক রোগীর দেহ থেকে করোনা-স্ট্রেন সংগ্রহ করে, তার সাহায্যে গবেষণাগারে টিকা তৈরি করা হয়েছে। ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন’ বলা হয়, কারণ মৃত ভাইরাস দিয়ে তৈরি
• টিকা যে পথে কাজ করবে: মৃত করোনাভাইরাস থেকে তৈরি, তাই ভ্যাকসিনটি শরীরে ঢুকে কোনও ক্ষতি (সংক্রমণ বা ভাইরাসের প্রতিলিপি গঠন) করে না। বরং মৃত ভাইরাস টের না-পেয়ে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সজাগ হয়। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে
শুরু করে
• ট্রায়াল রিপোর্ট: মানুষের উপরে পরীক্ষার আগে ইঁদুর ও গিনিপিগের উপরে পরীক্ষা করা হয়েছে। সংস্থার দাবি, দারুণ কার্যকর টিকা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
• নেতিবাচক দিক: এক সময়ে প্রতিষেধক আনায় তাড়াহুড়োর অভিযোগ উঠেছিল। এ-ও প্রশ্ন উঠেছিল, সরকারের চাপের মুখে তাড়াহুড়ো নাকি। যদিও সংস্থার দাবি, গবেষণা হয়েছে নিয়ম মেনে
তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ডের মতোই দু’ডোজ়ের কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের বাজারে আসা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-র সম্মতি দেওয়ার উপরে নির্ভর করছে। যদিও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি ছাড়পত্র দেওয়ার পরে সেই সম্মতি পাওয়া সময়ের অপেক্ষা বলেই মত স্বাস্থ্যকর্তাদের। রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আগামিকাল বেলা ১১টায় সাংবাদিক বৈঠক করে বিবৃতি দেবে ডিসিজিআই। আশা করা হচ্ছে সেখানেই এই দু’টি প্রতিষেধক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: কমছে সংক্রমণ, রাজ্যে এক হাজারের নীচে নেমে এল দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা
আরও পড়ুন: সৌরভের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ, ফের ‘স্টেন্ট’ বসানো নিয়ে সিদ্ধান্ত রবিবার
গত কালের পরে আজ দুপুরে বিশেষজ্ঞ কমিটি বৈঠকে বসার পর থেকেই কোভ্যাক্সিনের ছাড়পত্র পাওয়ার আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করে। গত কাল বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে কোভিশিল্ডের সঙ্গেই কোভ্যাক্সিনের ছাড়পত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকে ভারত বায়োটেক সংস্থার প্রতিনিধিদের কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ সংস্থার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত তথ্য জমা দেওয়ার পরে কার্যত এক সপ্তাহে আজ নিয়ে তৃতীয় বার বৈঠকে বসে ওই কমিটি। দিনভর বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দেয় ওই কমিটি।
বাজারে আসার দৌড়ে গোড়ায় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল কোভ্যাক্সিন। আইসিএমআর-এর ডিজি বলরাম ভার্গব ১৫ অগস্টের মধ্যে ওই টিকা বাজারে আসতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দিয়ে বসেন। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হওয়ার আগে কী ভাবে একটি প্রতিষেধক ছাড়পত্র পেতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
কোভ্যাক্সিন আজ ছাড়পত্র পেলেও, অনুমোদন সংক্রান্ত সমস্ত নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া অন্তত তিনটি দফার ফলাফল বিশ্লেষণ করে
তবেই কোভিশিল্ডকে ছাড়পত্র দিয়েছে কমিটি। ভারতেও ওই প্রতিষেধকের দুটি পর্বের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং সেই রিপোর্টও জমা পড়েছে সরকারের ঘরে। তবে কোভিশিল্ডের তৃতীয় দফার পরীক্ষা এখনও এ দেশে চালু রয়েছে। একই ভাবে কোভ্যাক্সিনের মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তিনটি ধাপের মধ্যে দু’টি ধাপের ফলাফলের ভিত্তিতে আজ ওই ছাড়পত্র দেয় বিশেষজ্ঞ কমিটি। ওই প্রতিষেধক কতটা কার্যকর তা বোঝা যায় তৃতীয় পর্বের প্রয়োগের পরেই। যা এখনও এ দেশে চালু রয়েছে। তৃতীয় পর্বের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগেই আজ জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের প্রশ্নে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয় ওই প্রতিষেধককে।
প্রশ্ন উঠেছে, কোভিশিল্ডের সঙ্গে পাল্লা দিতেই কি স্বদেশি ওই প্রতিষেধককে তড়িঘড়ি করে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হল?
সূত্রের মতে কমিটির কাছে বায়োটেকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তৃতীয় পর্বে মোট ৩২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপরে ওই প্রয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছিল ওই সংস্থা। গত নভেম্বরে শুরু হয়ে তৃতীয় দফায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপরে ওই প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছে। হরিয়ানার পিজিআইএমএস হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবকদের উপরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সবিতা বর্মা বলেন, “প্রথম ও দ্বিতীয় দফার প্রয়োগের ফলাফল ইতিবাচক। দু’টি ক্ষেত্রেই কার্যকারিতার প্রশ্নে ইতিবাচক ফল লক্ষ্য করা গিয়েছে। এখন তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালু রয়েছে। যার ফল আসতে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় লাগবে।”
সাধারণত তিনটি ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফলের উপরেই কোনও প্রতিষেধকের কার্যকারিতা চূড়ান্ত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, সাধারণত যদি কোনও প্রতিষেধক নিরাপদ ও কার্যকর হয় সে ক্ষেত্রে সেটিকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের প্রশ্নে ছাড়পত্র দেওয়া হয়ে থাকে। কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দু’টি পর্বে কোনও ক্ষতিকর রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে প্রতিষেধকের ফলে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি প্রায় ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। তাই কেবল দু’টি ধাপের ফলাফলের ভিত্তিতে জরুরি ভিত্তিতে ওই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
আজ কোভ্যাক্সিন ছাড়াও ভারতে তৈরি আমদাবাদের জাইডাস ক্যাডিলা সংস্থার তৈরি জাইকোভ ডি প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় ধাপ শুরু করার অনুমতি দিয়েছে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি।