ছবি রয়টার্স।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নজির গড়ে কোভিড থেকে সেরে উঠলেন এক লক্ষেরও বেশি রোগী। তবে আশাব্যঞ্জক এই পরিসংখ্যান জানানোর পাশাপাশিই আগামী মাস থেকে শুরু হতে চলা উৎসবের মরশুমে দেশবাসীকে কঠোর ভাবে কোভিড-স্বাস্থ্যবিধি মানতে বললেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁরা জানিয়ে দিলেন, এখনও সংক্রমিত হতে পারেন দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ। আগামিকাল সাতটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এ বারের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ নেই। কেন্দ্র জানিয়েছে, কাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পর্যালোচনা-বৈঠকে থাকবে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি এবং পঞ্জাব। এই সাতটি রাজ্যে সারা দেশের ৬৩ শতাংশেরও বেশি অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন। মোট সংক্রমিতের ৬৫.৫ শতাংশ এবং কোভিডে মৃতদের ৭৭ শতাংশেরও ঠিকানা এই রাজ্যগুলি। সংক্রমণের নিরিখে পঞ্জাব বাদে বাকি রাজ্যগুলি প্রথম ছয়ে রয়েছে। দিল্লি রয়েছে ছ’নম্বরে, পঞ্জাব ১৭ নম্বরে। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে সাতে। কিন্তু কেন্দ্রের বক্তব্য, ‘প্রথম পাঁচের’ পাশাপাশি দিল্লি এবং পঞ্জাবে সাম্প্রতিক কালে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে।
দেশে কোভিড আক্রান্তের দৈনিক সংখ্যা নব্বই হাজারের ঘরে ঘোরাফেরা করছিল দিন কয়েক আগে। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় তা নেমে এসেছে ৭৫ হাজারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, গত চার দিন ধরে দেশে নতুন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে সুস্থের সংখ্যাই একটানা বেশি রয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান, চ্যাট গ্রুপে জেহাদি বার্তালাপ
এই আশার সঙ্গেই অবশ্য রয়েছে উৎসবের মরশুম নিয়ে হুঁশিয়ারি। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্যবিধি পালনে ঢিলেঢালা মনোভাব চলবে না, বরং আরও কঠোর ভাবে তা মানতে হবে। কারণ, এখনও দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মাস্ক পরলে ৩৬ থেকে ৫০ শতাংশ করোনা সংক্রমণ প্রতিহত করা যায়। তাই টিকা না-আসা পর্যন্ত মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা, বড় জমায়েত এড়ানো, হাত পরিষ্কার রাখার মতো বিষয়গুলিই ‘সামাজিক প্রতিষেধক’ হিসেবে কাজ করবে।’’
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন, সারা বিশ্বে সব চেয়ে বেশি মানুষ কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন ভারতেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিশ্বে মোট সংক্রমণের ১৭.৭ শতাংশ ভারতে হয়েছে। আবার সারা দুনিয়ার করোনা-জয়ীদের মধ্যে ১৯.৫ শতাংশই ভারতের মানুষ। আমেরিকায় এই দু’টি হার যথাক্রমে ২২.৪ শতাংশ এবং ১৮.৬ শতাংশ, ব্রাজিলে যথাক্রমে ১৪.৫ শতাংশ এবং ১৬.৮ শতাংশ। ভারতে এখন অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা মোট সংক্রমিতের সংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও কম। ৫০ লক্ষের বেশি সংক্রমণ দেখে আমরা ভুলে যাই, এ দেশে ৪৫ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ সেরেও উঠেছেন।’’ স্বাস্থ্যসচিব জানান, বিশ্বে কোভিডে প্রতি দশ লক্ষে মৃত্যুর গড় ১২৩। কিন্তু ভারতে তা ৬৪, যা ন্যূনতম গড়গুলির অন্যতম।
আরও পড়ুন: ‘কোবাস’ বড় পজ়িটিভ! নমুনা পতন নাইসেডে
দেশজুড়ে চালানো সাম্প্রতিক সেরো-সার্ভেতে ১০টি ‘হটস্পট’ শহরের কন্টেনমেন্ট এলাকার তথ্য কেন দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন ওঠে সাংবাদিক বৈঠকে। আইসিএমআর-এর প্রধান বলরাম ভার্গব বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট এলাকাগুলি কোনও চূড়ান্ত এলাকা নয়। সেখানে সংক্রমণের বিন্যাসও ক্রমাগত পাল্টাতে থাকে। সেরো-সার্ভেতে সেখান থেকে নমুনাও নেওয়া হয় কম। এই কারণেই ওই এলাকাগুলির তথ্য দেওয়া হয়নি।’’