প্রায় রোজই দেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। ছবি: পিটিআই।
এক দিনে এ বার করোনায় সংক্রমিত আট হাজার মানুষ! পাঁচ হাজার পেরোল মৃতের সংখ্যা। মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় সাত নম্বরে উঠে এল ভারত।
প্রায় রোজই দেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। গত পরপর দু’দিন সাত হাজার পেরিয়েছিল আক্রান্তের সংখ্যা। আজ নতুন রোগী ৮৩৮০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯৩ জন রোগীর মৃত্যুর পরে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫১৬৪। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে, আজ সকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১,৮২,১৪৩। কিন্তু তার পর থেকে সারা দিনে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা হিসেব করে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, সংখ্যাটা ১,৯০,৫৩৬। ফলে ফ্রান্স ও জার্মানিকে পিছনে ফেলে সপ্তম স্থানে ভারত। তার ঠিক আগেই ইটালি (৬) ও ব্রিটেন (৫)।
এই পরিস্থিতিতে দেশে রেল, বাস, বিমান, অফিস, ব্যবসা পুরোদমে শুরু হলে অর্থনীতির চাকা গড়াবে ঠিকই, কিন্তু সংক্রমণ ঝড়ের গতিতে বাড়বে বলে আশঙ্কা অনেকের। আজ তাই ‘মন কি বাত’-এর রেডিয়ো বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে বলে সাবধানতায় ঢিলে দেওয়ার প্রশ্ন নেই। সামান্য গড়িমসিও ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে। যে কারণে রাস্তা-ঘাটে দু’গজ (ছ’ফুট) দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না-বেরোনোর উপরেই জোর দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সারা দেশের মানুষের এককাট্টা হয়েছেন বলেই বহু দেশের তুলনায় বেশি জনসংখ্যা অথচ কম সামর্থ্য নিয়ে করোনার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে ভারত। কিন্তু এখন সাবধানতায় সামান্য ঢিলে দিলে সব চেষ্টাই জলে যাবে।
আরও পড়ুন: শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ১৮ দিনে মৃত্যু ৮০ পরিযায়ী শ্রমিকের, বলছে রেল পুলিশের হিসেব
আরও পড়ুন: সব কিছু খুলছে, এখন আরও বেশি সাবধান থাকতে হবে, বললেন মোদী
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, অ্যাক্টিভ রোগী (৮৯৯৯৫) ও সুস্থের (৮৬৯৮৩) সংখ্যা এখন প্রায় কাছাকাছি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬১৪ জন সেরেও উঠেছেন। মোট সুস্থতার হার ৪৭.৭৬। তবে একই সঙ্গে ওই পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৯৩ জনের মধ্যে ৯৯ জনই মহারাষ্ট্রের, ২৭ জন গুজরাতের, ১৮ জন দিল্লির এবং ৭ জন পশ্চিমবঙ্গের। ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিনশো পেরিয়েছে। অসমে আক্রান্ত ১৩৩৯, মণিপুরে ৭৫। রাজ্যগুলির মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা মহারাষ্ট্রেই সর্বাধিক (২১৯৭)। তা সত্ত্বেও রাজ্যের মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে আজ জানিয়েছেন, সতর্ক ভাবেই ‘মিশন বিগিন আগেন’ শুরু করছে মহারাষ্ট্র সরকার। তাই ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন রেখেও রাজ্যবাসীকে ঘরের বাইরে গিয়ে শারীরচর্চা, দৌড়নো, সাইকেল চালানোয় উৎসাহ দিয়েছে সরকার। কাজ শুরু করতে পারবেন কলের মিস্ত্রি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরাও। ৩ জুন থেকে ১৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে সরকারি অফিস খুলবে। ৫ তারিখ থেকে দু’জন যাত্রী নিয়ে চলতে পারবে অটো-ট্যাক্সি। জোড়-বিজোড়ের ভিত্তিতে বাজার-দোকানও খুলবে।
উত্তরাখণ্ডের পর্যটনমন্ত্রী সতপাল মহারাজ ও তাঁর স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রী-সহ পুরো মন্ত্রিসভাই কোয়রান্টিনে। দিল্লিতে দু’দিনে করোনায় মারা গিয়েছেন দু’জন পুলিশকর্মী। তা সত্ত্বেও সরকার জানিয়েছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার পর্ব চলবে। জাতীয় রাজধানী এলাকায় সমস্ত কর্মী নিয়ে, সুরক্ষাবিধি মেনে অফিসগুলিকে তিন শিফটে কাজ করতে বলা হয়েছে।