ছবি: পিটিআই।
আজ রাত ৯টায় গোটা দেশকে ৯ মিনিটের জন্য ঘরের আলো নিভিয়ে রেখে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে 'মহাশক্তি'কে জাগ্রত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু আচমকা গোটা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গিয়ে আবার ৯ মিনিট পরে বেড়ে গেলে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, ওই ৯ মিনিট কি ঘরের এসি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপও বন্ধ রাখতে হবে? শনিবার দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চর্চার পরে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক জানায়, প্রধানমন্ত্রী শুধু আলো নেভানোর কথাই বলেছেন, অন্য কোনও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্ধ করার কথা নয়।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ বলছেন, সাবধানের মার নেই। ওই ৯ মিনিট টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ রাখাই ভাল। তাই না-হলে আচমকা ভোল্টেজের ওঠানামায় দেহ রাখতে পারে আপনার সাধের যন্ত্রটি। লকডাউনের বাজারে সেটি সারানোর মিস্ত্রিও আপনি পাবেন না!
তবে এসি, ফ্রিজ, টিভি বন্ধ রাখলে সামগ্রিক ভাবে জটিলতা বাড়বে বই কমবে না। কারণ, তখন বিদ্যুতের চাহিদা আরও কমে যাবে। ফলে কঠিন হবে গ্রিডের প্রয়োজনীয় ফ্রিকোয়েন্সি ধরে রাখা। যদিও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক শনিবার দাবি করেছে, দেশের গ্রিড ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। বিদ্যুতের চাহিদার ওঠা-নামা মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য, আজ রাত সাড়ে আটটার পর থেকে জাতীয় গ্রিডের ন্যূনতম ফ্রিকোয়েন্সি ৪৯.৯০ হার্ৎজে ধরে রাখা।
আরও পড়ুন: ‘আলোর নির্দেশিকা’ নিয়ে প্রশ্ন রাহুলের
বিদ্যুৎ মন্ত্রক আশ্বস্ত করলেও আজ রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ধাপে ধাপে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। গ্রিড ব্যবস্থা ভেঙে গিয়ে জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎমন্ত্রী নিতিন রাউতও।
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের পরামর্শ
• রাত ৯টা থেকে ৯ মিনিট চাইলে শুধু আলো বন্ধ
• বাড়ির টিভি, ফ্যান, রেফ্রিজারেটর, কম্পিউটার, এসি বন্ধ করার কথা বলা হয়নি
• রাস্তা, হাসপাতাল, জরুরি পরিষেবা, পুর পরিষেবা, অফিস, থানা, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্রে
আলো জ্বলবে
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
• ভোল্টেজের ফারাক হওয়ার সম্ভাবনা। ফলে এসি, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি বন্ধ রাখাই ভাল
পোসোকোর পর্যবেক্ষণ
• রাত ৯টায় আলো নিভলে দেশে গ্রিডের চাহিদা ১২,৮৭৯ মেগাওয়াট কমবে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রিডে ৭৫৩ মেগাওয়াট চাহিদা কমতে পারে
পোসোকোর লক্ষ্য
• সাড়ে ৮টার পর থেকে জাতীয় গ্রিডের ন্যূনতম ফ্রিকোয়েন্সি ৪৯.৯০ হার্ৎজের মধ্যে রাখা
• গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ৫০.৪ হার্ৎজের বেশি উঠতে দেওয়া হবে না
বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কল-কারখানা বন্ধ থাকায় এখন বিদ্যুতের চাহিদা কম। তার মধ্যে দেশ জুড়ে খুব অল্প সময়ের জন্য গৃহস্থের চাহিদা হঠাৎ কমে গেলে গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় ভারসাম্য রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যোজনা কমিশনের পরিকাঠামো বিষয়ক প্রাক্তন আধিকারিক অমিতাভ রায় জানিয়েছেন, হঠাৎ চাহিদা কমে বা বেড়ে গেলে তা সামলানো বেশ কঠিন। চাহিদা আর জোগানের অঙ্কে সামান্য ভুল হলেই গ্রিড ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে। যেমনটা হয়েছিল ২০১২ সালে। অন্ধকার নেমে এসেছিল গোটা উত্তর ভারতে। বড় ধাক্কা লেগেছিল পূর্ব ভারতেও। আজ রাত ৯টায় হঠাৎ চাহিদা কমে গিয়ে গ্রিডের উপর প্রবল চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন আইআইইএসটি শিবপুরের পড়ুয়াদের একাংশ।
সূত্রের খবর, জাতীয় গ্রিড সুরক্ষিত রাখতে কেন্দ্রীয় সংস্থা পোসোকো সব রাজ্যকে পরামর্শ দিয়েছে। ন্যাশনাল ও স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারগুলির সঙ্গে যোগ রেখে রাজ্যগুলি উৎপাদন বাড়াবে-কমাবে। আজ রাত ৮টার পর থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ধাপে ধাপে কমানো হবে। যাতে যখন আলো নিভবে, তখন গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চলে না আসে। আবার ৯টা ৯ মিনিটের পর যখন ফের আলো জ্বলবে, তখন বাড়তি চাহিদা মেটাতে জলবিদ্যুৎ, গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ, পাম্প স্টোরেজ কেন্দ্রগুলিকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। কারণ, চাহিদা হঠাৎ বাড়লে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন চট করে বাড়ানো যায় না।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধে থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো-বাড়ানোর সব রকম অঙ্ক আমাদের ইঞ্জিনিয়ররা করে রেখেছেন।’’ ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানান, রাত ৯টার পর মাইথন ও পাঞ্চেৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ানোয় বেশি জোর দেওয়া হবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)