Coronavirus in India

দেশ জুড়ে টিকা-পর্যটনের বিজ্ঞাপন? সতর্ক করে দিলেন মন্ত্রীও

যেখানে বিমান থেকে নামলেই দু’সপ্তাহের কোয়রান্টিন বাধ্যতামূলক, সেখানে পৌনে দু’লাখ টাকা আর তিন দিন-চার রাত কাটিয়ে কী ভাবে করোনার দু’টো ডোজ় হয়ে যাবে? 

Advertisement

স্নেহাংশু অধিকারী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

পৌনে দু’লাখেই কাবু করোনা!

Advertisement

ছড়িয়ে পড়েছে ‘প্রতিষেধক পর্যটনের’ বিজ্ঞাপন। যাতে দাবি করা হচ্ছে, সরকারি টিকার ভরসায় না-থেকে বরং আমেরিকা থেকে টিকা নিয়ে আসুন। তিন দিন, চার রাত আমেরিকায়। বিমানভাড়া আর থাকার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট ফ্রি।

এই বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে পড়ায় সঙ্গত ভাবেই উঠেছে প্রশ্ন। যেখানে বিমান থেকে নামলেই দু’সপ্তাহের কোয়রান্টিন বাধ্যতামূলক, সেখানে পৌনে দু’লাখ টাকা আর তিন দিন-চার রাত কাটিয়ে কী ভাবে করোনার দু’টো ডোজ় হয়ে যাবে?

Advertisement

আরও পড়ুন: জরুরি ভিত্তিতে টিকা ব্যবহারের আবেদন জানাল ভারত বায়োটেক

আরও পড়ুন: করোনাবিধি ভাঙলেই লিখতে হচ্ছে প্রবন্ধ! অভিনব শাস্তি গ্বালিয়রে

কোনও উত্তর নেই মুম্বইয়ের জেম টুর অ্যান্ড ট্রাভেল কোম্পানির ডিরেক্টর তেজস কপাসির কাছে। তাঁর দাবি, তাঁরা এখন শুধুই আগ্রহীদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করে রাখছেন। কারও কাছে এক টাকাও অগ্রিম নেওয়া হচ্ছে না। আর তাঁর ক্লায়েন্টরাই নাকি আবদার করেছিলেন, ‘যেখানে খুশি নিয়ে যান, শুধু কোভিডের টিকা পেলেই হবে’।

ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট জ্যোতি মালয়া কিন্তু ফোনে সাফ বললেন, ‘‘যত্ত আজগুবি! কিসের ভিত্তিতে এরা এমন প্যাকেজের দাবি করছেন জানি না। মুম্বইয়ের ওই ভ্রমণ সংস্থা আমাদের সদস্যও নয়। তাই গ্রাহকদের বলব, এই সব প্রস্তাবে না ভুলতে। ফাইজ়ারের টিকায় সায় দিয়েছে ব্রিটেন। কিন্তু ওঁরা নিজেরাই তো সবাই এখন টিকা পাবেন না!’’

কলকাতার জ়েনিথ হলিডেজ়-ও এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। প্রথমে এদের আমেরিকা-প্যাকেজ ছিল মাথাপিছু দেড় লাখের— প্রথম একশো জনের জন্য। সম্প্রতি ব্রিটেনে ফাইজ়ারের টিকাকরণ শুরু হয়ে যাওয়ায়, এখন জ়েনিথের চাঁদমারি লন্ডন। নজরে, ফেব্রুয়ারি। ওয়েবসাইটে চলছে নাম লেখানোও! কিন্তু ব্রিটেনে এ ভাবে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া যায়? বিদেশ থেকে ব্রিটেনে পা রাখলেই এখন ১৪ দিনের কোয়রান্টিন। ১৫ ডিসেম্বর থেকে সাধারণের জন্য সেই সময়সীমা অর্ধেক হবে। তবে পাঁচ দিনের কোয়রান্টিনের মাথায় ৬০ পাউন্ড বা ১২০ পাউন্ড খরচ করে কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। সেই পরীক্ষার ফল মিললে তবে সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে? সরাসরি উত্তর মিলল না। দিল্লি থেকে জেনিথের ডিরেক্টর মনোজ মিশ্র শুধু বললেন, ‘‘আমরা তো ওখানে টুরিস্টদের ঘরবন্দি করে রাখতে নিয়ে যাচ্ছি না! পরিস্থিতি বুঝে আমরাই ব্যবস্থা নেব। আমাদের বিশ্বাস, ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনে অধিকাংশের টিকাকারণ হয়ে যাবে। সব স্বাভাবিক থাকবে। আপাতত আমরা গ্রাহকদের টুর প্যাকেজটা বুক করে রাখতে বলছি। ভ্যাকসিন পেলে তো সোনায় সোহাগা।’’

পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কারা করছে এ সব? শুধু নামটা দিন, আর কাগজপত্র। আমিই মামলা করব। অবশ্য মানুষ সতর্ক না-হলে কোনও লাভ নেই। এমন ফাঁদ পাতা চলতেই থাকবে। টাকা দিলেই ফাঁসবেন। তখন আর কান্নাকাটি করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’’ এই কান্নাকাটির সম্ভাবনা কিন্তু অনেকেরই মাথায় নেই। তাঁরা দিব্য ওয়েবসাইটে নাম লেখাচ্ছেন। কেন? মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বললেন, ‘‘আসলে টানা গৃহবন্দি থেকেও সংক্রমণ এড়ানো যাচ্ছে না দেখে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এরা সেই ভয়টাকেই মূলধন করছে। আমার টাকা আছে, আমি কেন সরকারি বন্দোবস্তের জন্য অপেক্ষা করব— এই মনোবৃত্তিটাও খুব মারাত্মক!’’

কিছু ভ্রমণ সংস্থার প্রচারে আবার আসতে শুরু করেছে রাশিয়া-দুবাইও! তবে তাদের কাছে যে টিকার স্টক নেই এবং পুরোটাই নির্ভর করছে বিদেশি সরকারের সিদ্ধান্তের উপর, আলাদা ডিসক্লেমার দিয়ে সে কথাও জানাতে হয়েছে জেম-কে।

কিন্তু খোলা বাজারে টিকার কেনাবেচা কি আদৌ সম্ভব? ৫০ লক্ষের দেশ নিউজ়িল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি-বিষয়ক ও জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক অরিন্দম বসু বললেন, ‘‘অসম্ভব। অন্তত নিউজ়িল্যান্ডে তো বটেই। টিকা-পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে ওরা যেন ভুলেও এ দেশের কথা না ভাবে। প্রথমত, এখানে প্রবেশাধিকার পাওয়া সহজ নয়। আর দ্বিতীয়ত, এলেও অন্তত ১৪ দিন নিজের খরচে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে।’’

টিকাপিপাসুরা কিন্তু ডেটাব্যাঙ্ক ভরিয়েই চলেছেন। নাম, ঠিকানা, বয়স, মেল আইডি, পাসপোর্টের কপি, এমনকি কোমর্বিডিটি আছে কি না, সেটাও জানতে চাইছে বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু এই তথ্য যদি

বেহাত হয়ে যায়? সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এ সব তথ্য দিয়ে তো দিব্যি প্রোফাইলিং করে নজরদারি চালানো যায়। ই-পাসপোর্টের যুগে নকল পাসপোর্ট বানানোও কঠিন কিছু নয়। তা ছাড়া কোমর্বিডিটির তথ্য মানে সেটা হেলথ ডেটা। এ নিয়ে কারবার হলে, আইটি আইন মোতাবেক তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement