লকডাউন ও করোনা বিধি না মানলে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
জীবন না জীবিকা—এই প্রশ্নে কার্যত পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। রুজি-রুটির টানে মানুষ রাস্তায় বেরোচ্ছেন, কিন্তু মাস্ক, সামাজিক দূরত্বের বিধি ঠিকমতো মানছেন না অনেকেই। কমে যাচ্ছে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা। এই বিষয়টি নিয়েই জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীকে সাবধান করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রী— আইন যে সবার জন্যই সমান, সে কথা স্পষ্ট করে দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে লকডাউন ও করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কড়া হাতে মোকাবিলা করার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভ মাস্ক না পরে জনসমক্ষে বেরিয়েছিলেন। তার জন্য সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক তাঁকে ৩০০ লেভ (বুলগেরিয়ার মুদ্রা) বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। সেই উদাহরণ টেনেই প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়েছেন, আইন সবার জন্যই সমান। করোনা সম্পর্কিত বিধিনিষেধ না মানলে কাউকে ছাড়া হবে না, জাতির উদ্দেশে ভাষণে সেই সাবধানবাণীও শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা খবরে শুনে থাকবেন, সম্প্রতি একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী মাস্ক না পরে বেরনোয় তাঁকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’’ স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘ভারতেও স্থানীয় প্রশাসনকে এই উদ্যমের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এটা ১৩০ কোটি দেশবাসীকে রক্ষা করার প্রশ্ন। ভারতে পঞ্চায়েত প্রধান হোক বা প্রধানমন্ত্রী, আইন সবার জন্য সমান।’’
এখনও দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা। তার মধ্যেই ১ জুন থেকে শুরু হয়েছিল আনলক-১। অর্থাৎ ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এক মাস পর আগামিকাল ১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে আনলক টু। অর্থাৎ লকডাউন আরও শিথিল করে জোরদার হচ্ছে অর্থনৈতিক কাজকর্ম।
জনসমক্ষে মাস্ক না পরে বেরনোয় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভকে। —ফাইল চিত্র
আরও পড়ুন: নভেম্বর পর্যন্ত ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য: ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
এই আনলক পর্ব নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লকডাউন পর্বে যতটা সাবধান ও সতর্ক ছিলেন মানুষ, এখন তা কমে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আনলক ওয়ান শুরু হতেই দেখছি সাবধানতা উধাও। দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বেডে় গিয়েছে। উধাও হয়ে যাচ্ছে মাস্ক পরা, দু’গজ দূরত্বের বিধি। কিন্তু এখন যখন আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে, সেই সময় এই সতর্কতা কমে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’’
প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় নিয়মকানুন কঠোর ভাবে মেনে চলেছি। এখন সরকার, স্থানীয় প্রশাসনকে দেশের সাধারণ মানুষকে ফের সেই একই রকম (লকডাউনের সময়ের মতো) সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে কন্টেনমেন্ট জোনের উপর আমাদের অত্যন্ত কড়া নজর রাখতে হবে। যে সব মানুষ নিয়ম মানছেন না, তাঁদের আটকাতে হবে, বোঝাতে হবে।’’
আরও পড়ুন: করোনায় মোট আক্রান্ত পাঁচ লক্ষ ৬৬ হাজার, সুস্থ হয়ে উঠলেন ৫৯ শতাংশ
ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাভাবিক ভাবেই সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এই সময় এমনিতেই সাবধানে থাকা দরকার। সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘লকডাউনে কঠোর ভাবে নিয়মকানুন মেনেছেন দেশবাসী। এই মরসুমে এমনিতেই সর্দি-কাশি বাড়ে। তাই এখন দেশবাসীকে লকডাউনের সময়ের মতোই সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে।’’