ইউরোপ-আমেরিকার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি নয়। কিন্তু ভারতে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা একটু একটু করে হলেও এখনও বেড়ে চলেছে। গত সাত দিনে গড়ে সংখ্যাটা ১১৭০-এর মতো। তবে এর মধ্যে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে। গত ১৪ দিনে নতুন করে একটাও সংক্রমণের সন্ধান পাওয়া যায়নি, এমন জেলার সংখ্যা দেশে বাড়ছে।
ভারতে মোট জেলার সংখ্যা ৭২০। তার মধ্যে ২৯৪টি জেলায় এই প্রতিবেদন তৈরি করার সময় পর্যন্ত কোনও করোনা সংক্রমণের সন্ধান পাওয়া যায়নি। বাকি ৪২৬ জেলায় কোনও না কোনও সময়ে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। এই ৪২৬ জেলার মধ্যে আছে ৬৫টি এমন জেলা, যেখানে গত ১৪ দিনে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। এর মধ্যে ৪টি জেলায় আবার গত ২৮ দিনেই কোনও করোনারোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ সংক্রমণের খোঁজ না পাওয়া ২৯৪ এবং গত ১৪ দিনে নতুন করে সংক্রমণের খবর না আসা ৬৫, সব মিলিয়ে এখন করোনামুক্ত জেলার সংখ্যা ৩৫৯টি। বাকি ৩৬১ জেলা এখনও কমবেশি করোনা সংক্রমিত। অর্থাত্ দেশের অর্ধেক জেলা এখন করোনামুক্ত বলা যায়। জেলা ভিত্তিক সংক্রমণের এই পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া।
ইতিবাচক ছবি দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেও। এ রাজ্যে করোনা সংক্রমিত হয়েছে এমন তিনটি জেলায় গত ১৪ দিনে নতুন কোনও আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি।
পশ্চিমবঙ্গের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যান বিস্তারিত জানার আগে, আসুন এক বার দেখে নিই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি। গত ১৪ দিন নতুন কেউ করোনা সংক্রমিত হননি, এমন আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১৬ এপ্রিল ছিল ২৭টি। পরদিন সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ৩৭।
১৮ এপ্রিল এই ধরনের জেলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছয় ৪৭-এ। তার পর ১৯ এপ্রিল ৫৩, ২০ এপ্রিল ৫৯ এবং ২১ এপ্রিল এই পরিসরের জেলার সংখ্যা হয়েছে ৬৫। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণিত হয়েছিল এমন ৬৫টি জেলায় গত ১৪ দিনে নতুন করে কেউ করোনা আক্রান্ত হননি।
কোন কোন জেলায় গত ১৪ দিনে নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি, দেখে নিই সেই তালিকা। মণিপুরের থুবল ও পশ্চিম ইম্ফল; মিজোরামের আইজল পশ্চিম, গোয়ার উত্তর ও দক্ষিণ গোয়া; ওড়িশার ভদ্রক ও পুরী; ছত্তীসগড়ের বিলাসপুর, দুর্গ, রাজনন্দগাঁও ও রায়পুরে গত ১৪ দিনে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি।
বিহারের লখিসরাই, সারন, গোপালগঞ্জ, গয়া ও পটনা জেলায় গত ১৪ দিনে নতুন করে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম; জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামা ও রজৌরি; মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলায় ১৪ দিনে নতুন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি।
হরিয়ানার রোহতক, চরখি দাদরি, ভিওয়ানি, হিসার ও পানিপথ জেলা; পঞ্জাবের হোসিয়ারপুর, ফতেগড় সাহিব, রূপনগর, এসবিএস নগর জেলা; গুজরাতের জামনগর, মোরবি, গির সোমনাথ এবং পোরবন্দর জেলা; উত্তরপ্রদেশের বরেলী, পিলিভিট জেলায় গত ১৪ দিনে সন্ধান পাওয়া যায়নি নতুন কোনও করোনা আক্রান্তের।
রাজস্থানের ঢোলপুর, উদয়পুর, পালি জেলা; তেলঙ্গনারা ভদ্রদি কোথাগুড়েম; কর্নাটকের চিত্রদুর্গ, দেবঙ্গারে, উদুপি এবং বেল্লারি জেলা; কেরলের ওয়ানাদ ও কোট্টায়াম; মহারাষ্ট্রের লাতুর, ওসমানাবাদ, হিঙ্গোলি, ওয়াসিম জেলাতেও কোনও নতুন করোনা সংক্রমণের খবর নেই গত ১৪ দিনে।
অসমের করিমগঞ্জ, গোলাঘাটা, কামরূপ গ্রামীণ, নলবাড়ি, দক্ষিণ সালমারা, কাছাড় এবং লখিমপুর জেলাতেও গত ১৪ দিনে নতুন করোনা সংক্রমণের হার শূন্য। একই ছবি অরুণাচল প্রদেশের লোহিত ও ত্রিপুরার গোমতী জেলায়।
এই ৬৫টি জেলার মধ্যে চারটিতে আবার গত ২৮ দিনে নতুন করোনা সংক্রমণের কোনও খবর নেই। সেগুলি হল পুদুচেরির মাহে, উত্তরাখণ্ডের পউরি গাড়োয়াল, রাজস্থানের প্রতাপগড় এবং কর্নাটকের কোড়াগু জেলা।
পশ্চিমবঙ্গে ২৩টির মধ্যে ৯টি জেলায় এখনও পর্যন্ত একটিও করোনা সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া যায়নি। করোনা সংক্রমণে নাম ওঠা বাকি ১৪টি জেলার মধ্যে চারটি হটস্পট। এই জেলাগুলি হল কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর।
হটস্পট ছাড়া রাজ্যে করোনা সংক্রমিত জেলার সংখ্যা ১০। এই ১০টির মধ্যে তিনটিতে গত ১৪ দিনে নতুন করে কোনও সংক্রমণ হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের যে তিন জেলায় গত ১৪ দিনে নতুন করে কেউ করোনায় সংক্রমিত হননি সেগুলি হল নদিয়া, জলপাইগুড়ি এবং কালিম্পং। (তথ্যসূত্র : কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য়মন্ত্রক, ২২.০৪.২০ পর্যন্ত) (গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)
দেশের ছ’টি রাজ্য অবশ্য এই জেলাভিত্তিক ইতিবাচক ট্রেন্ডের বাইরে। এ গুলি হল দিল্লি, তামিলনাড়ু, হিমাচল প্রদেশ, চণ্ডীগড়, লাদাখ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এই ছয় রাজ্যের যে সব জেলায় করোনা-সংক্রমণ ঘটেছে, তার সব গুলিতেই গত ১৪ দিনের মধ্যে কমবেশি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে।