অমিতাভ-ঘনিষ্ঠের ফোন ফেরালেন কুলি। ফাইল ছবি।
স্টেশনের বেঞ্চে পড়েছিল দামি মোবাইল ফোন। কোনও যাত্রী হয়তো অসাবধানতাবশত তা ফেলে চলে গিয়েছিলেন। ফোনটি চোখে পড়তেই হাতে তুলে নিলেন বৃদ্ধ। তবে ভোগ করার জন্য নয়, ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
মুম্বইয়ের দাদর স্টেশনে প্রায় তিন দশক ধরে কুলি হিসাবে কাজ করেন দশরথ। দিনে তাঁর রোজগার মেরেকেটে ৩০০ টাকা। তবু বেঞ্চের উপর পরিত্যক্ত দামি মোবাইলটি দেখে ৬২ বছরের দশরথের মনে লোভ জাগেনি বিন্দুমাত্র। চাইলেই তিনি মোবাইলটি বিক্রি করে মোটা টাকা পেতে পারতেন। কিন্তু ওই মোবাইল হাতে বৃদ্ধ সোজা চলে যান রেলপুলিশের কার্যালয়ে। পুলিশের হাতে তিনি ফোনটি তুলে দিয়েছেন। তাঁর এই সততার প্রশংসা করেছেন রেল আধিকারিকেরা।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, দশরথের কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনটির আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ফোনটির সঙ্গে স্বয়ং অমিতাভ বচ্চনের যোগ রয়েছে। অমিতাভের মেক-আপ আর্টিস্ট দীপক সাওয়ান্ত ওই ফোনের মালিক। তিনিই ভুলবশত ফোনটি স্টেশনে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। রেলপুলিশ তাঁর হাতে ফোনটি তুলে দিয়েছে।
সাওয়ান্ত পরিবার কুলি দশরথকে তাঁর সততার জন্য পুরস্কৃত করেছে। তাঁকে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে পুরস্কার হিসাবে।
দশরথ জানান, রাত ১১.৪০ নাগাদ তিনি প্রতি দিনের মতো যাত্রীর মালপত্র ট্রেন থেকে নামাচ্ছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনের বেঞ্চে একটি ফোন পড়ে থাকতে দেখেন। ফোনটি তুলে নিয়ে তিনি আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ফোনটি তাঁদের কারও কি না। কিন্তু কেউ ফোনটি নিজের বলে দাবি করেননি। তার পরেই দশরথ সোজা চলে যান পুলিশের কাছে।
পুলিশকে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই সমস্ত দামি জিনিস ব্যবহার করি না। আর কখনও অন্যের জিনিসপত্র নিজের কাছেও রাখি না।’’ ফোন জমা দিয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর কাছে ফোন যায়। পুলিশ জানায়, ফোনের মালিককে পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন আধিকারিকেরা।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল অমিতাভের জনপ্রিয় ছবি ‘কুলি’। মুম্বইয়ের এমনই এক স্টেশনে মালবাহক হিসাবে দেখা গিয়েছিল বিগ-বিকেও। ওই ছবিতে কাজ করার সময় চোট পেয়ে নাকি মরতে বসেছিলেন অমিতাভ। বাস্তবের দশরথের মধ্যে যেন সিনেমায় অমিতাভের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সৎ কুলিকেই প্রত্যক্ষ করল দাদর স্টেশন।