—প্রতীকী ছবি
কোভ্যাক্সিন ঘিরে বিতর্কের জল শেষমেশ গড়াল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।
ভারত বায়োটেকের ওই কোভিড টিকাকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিতর্ক দানা বেঁধেছে মানবদেহে তৃতীয় দফায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আগেই অনুমোদন দেওয়া ঘিরে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার পরীক্ষার কার্যকারিতার তথ্য কেন সামনে আনছে না কেন্দ্র? সরব গবেষকদের একাংশও। এই অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ১২ জানুয়ারি বৈঠকে বসবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। অনুমান, সেখানে বিরোধীদের কড়া প্রশ্ন অপেক্ষা করবে সরকারের জন্য। যার জবাব দিতে থাকার কথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণের।
অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড (এ দেশে যা তৈরি করবে সিরাম ইনস্টিটিউট) আর ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন— রবিবার একই সঙ্গে এই দুই প্রতিষেধক ছাড়পত্র পাওয়ার পরে এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলেছিলেন, মূলত কোভিশিল্ডই দেওয়া হবে। কোভ্যাক্সিন থাকবে ‘ব্যাক আপ’ হিসেবে। এতেই ওই প্রতিষেধকের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বিতর্ক তৈরি হয় ছাড়পত্র ঘিরে।
আরও পড়ুন: নামের স্বত্ব আদায় করতে মামলা সিরামের বিরুদ্ধে
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, দেশে প্রথম দফায় তিন কোটি জনের টিকাকরণ হবে। সে জন্য প্রয়োজন অন্তত ছ’কোটি প্রতিষেধক। সিরামের ভাঁড়ারে ইতিমধ্যেই ৭ কোটি টিকা রয়েছে। সেখানে ভারত বায়োটেকের ঘরে মজুত দেড় কোটি। কোভিশিল্ডের বিষয়ে ভাবনা সেই কারণেই।
গবেষণায় তাড়াহুড়োর অভিযোগ তুলে আজ সমাজকর্মী সাকেত গোখলের টুইট, “ভারত বায়োটেকের টিকা মানবদেহে তৃতীয় পর্বে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য স্বেচ্ছাসেবী নথিভুক্ত হওয়ার কথা ছিল আগামী নভেম্বরে। সেখানে গত নভেম্বর থেকেই তৃতীয় পর্বের গবেষণা শুরু করেছে তারা! প্রথম পর্বের প্রয়োগ চলতে চলতেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের প্রয়োগ শুরু হয়েছে।’’ বিরোধীদেরও অভিযোগ, আইসিএমআরের সঙ্গে জোট থাকায় বাড়তি সুবিধা হায়দরাবাদের সংস্থাটি। নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে গবেষণার সব ধাপ নিয়ম মেনে পেরোয়নি তারা।
আরও পড়ুন: নতুন স্ট্রেনে উপচে যাচ্ছে শিশু ওয়ার্ড
স্বাস্থ্যকর্তাদের উত্তর, অতিমারি মোকাবিলায় দ্রুত টিকা আনতে অনেক সময়ই মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দু’টি ধাপকে এক সঙ্গে করার অনুমতি দেওয়া হয়। এটি নিয়ম ভাঙা নয়। বিদেশেও তা হচ্ছে। তৃতীয় দফার ফলের আগেই অনুমোদন প্রসঙ্গে যুক্তি, রাশিয়ান টিকা স্পুটনিক-ভি দ্বিতীয় দফায় প্রয়োগের পরেই সে দেশে ছাড়পত্র পেয়েছে। ভারতেও কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের একাধিক ধাপের গবেষণা এক সঙ্গে চালু।
নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পলের কথায়, “ব্রিটেন হোক বা আমেরিকা— সকলেই জরুরি ভিত্তিতে টিকা ব্যবহারে অনুমতি দিয়েছে। সময়ের অভাবে চিরাচরিত ধাপ মেনে গবেষণার সুযোগ পায়নি। ভারতও ব্যতিক্রম নয়।”
এ ছাড়া, কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখন চালু রয়েছে। যার ফলাফল আসবে মার্চের মধ্যে। সূত্রের মতে, তা ইতিবাচক হলে, কোভিশিল্ডের মতো কোভ্যাক্সিনকেও সমান ভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়ে যাবে।
টিকা-বিতর্ক জারি থাকলেও কেন্দ্র যে আগামী সপ্তাহ থেকে গণ টিকাকরণ শুরু করতে বদ্ধপরিকর, সেই ইঙ্গিত গতকালই দিয়েছেন রাজেশ। ইতিমধ্যে টিকা দেওয়ার দু’দফা পরীক্ষামূলক প্রস্তুতি (ড্রাই রান) সারা। শুক্রবার হবে তৃতীয় দফার মহড়া। মন্ত্রক জানিয়েছে, দ্বিতীয় মহড়া ১২৫টি জেলায় হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবারের মহড়া দেশের সবক’টি অর্থাৎ ৭১৮টি জেলায় হবে।
প্রতি জেলায় ৩-৪টি শিবির বসবে। খতিয়ে দেখা হবে পরিকাঠামোজনিত সমস্যা। প্রতিষেধক সংক্রান্ত মোবাইল অ্যাপ কো-উইন পুরো দেশের তথ্য সামলানোর চাপ নিতে পারছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। নজর থাকবে কোল্ড চেনজনিত পরিকাঠামোর উপরে। তৃতীয় দফার মহড়া সম্পর্কে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় সব রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।