সিএএ-এর সমর্থনে মিছিল। —ফাইল চিত্র
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর সমর্থন করার জন্য অমিত শাহের দেওয়া ফোন নম্বরকে কেন্দ্র করে দেশ জোড়া বিতর্কের মুখে পড়ে এ বার পাল্টা অস্ত্র প্রয়োগ করল বিজেপি। রবিবার ওই নম্বরের গ্রাহক ও মোবাইল সংস্থার মধ্যে চালাচালি হওয়া দুটি চিঠিকে সামনে রেখে এ বার বিরোধীদের নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির। গতকাল ওই নম্বর প্রকাশ্যে আসার পর দেখা যায়, সেই একই নম্বর থেকে বন্ধুত্ব, যৌনতা, এমনকি চাকরির প্রস্তাব দিয়েও ফোন করতে বলা হচ্ছে। আর তাতে বিরোধীরা অভিযোগ করতে শুরু করে, ওই নম্বরের মাধ্যমে আসলে ‘টোপ’ দিয়ে সিএএ-কে সমর্থন আদায়ের কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
গতকাল সিএএ-এর সমর্থনে অমিত শাহ-র দেওয়া ফোন নম্বর নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। তার মুখে পড়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছিল বিজেপিকে। রবিবার অবশ্য নতুন করে আক্রমণ সাজিয়েছে গেরুয়া শিবির। ওই ফোন নম্বর ব্যবহারকারী সংস্থা ও মোবাইল পরিষেবা দানকারী সংস্থার দুটি চিঠি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি থেকে ওই নম্বরটি যে বিজেপির সিএএ প্রচারের জন্য ব্যবহার তারও উল্লেখ রয়েছে সেই দুটি চিঠিতেই। আর এই সূত্র ধরেই বিজেপি পাল্টা আঙুল তুলেছে বিরোধীদের দিকে।
সিএএ সমর্থনে যে ফোন নম্বরটি অমিত শাহ দিয়েছিলেন তা এত দিন ধরে ব্যবহার করে আসছিল কসমিক ইনফর্মেশন অ্যান্ড টেকনলজি লিমিটেড নামে একটি সংস্থা। শনিবারের বিতর্কের পরেই, ওই ফোন নম্বরের পরিষেবা দানকারী সংস্থা ভোডাফোন-আইডিয়াকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে কসমিক। মোবাইল সংস্থাটির উদ্দেশে লেখা হয়েছে , ‘‘আমরা নিশ্চিত করছি যে, গত দু’বছর ধরে এই নম্বরটি অন্য কোনও গ্রাহক, কোনও ব্যক্তি বা কোনও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। আমরা গত ২ জানুয়ারি থেকে এই নম্বরে ভারতীয় জনতা পার্টির মিসড কল ক্যাম্পেন শুরু করেছ। এ নিয়ে বিপরীতমুখী যে সব কথা বলা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর এবং কলঙ্কিত করার জন্য।’’
এই চিঠি পাওয়ার পর, মোবাইল সংস্থাটিও পাল্টা জানিয়ে দেয়, ‘‘এই নম্বরটি ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের নিজস্ব সম্পত্তি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই নম্বরটি দেওয়া হয়েছিল কেবলমাত্র আমাদের গ্রাহক কসমিক ইনফর্মেশন অ্যান্ড টেকনলজি লিমিটেডকে। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ওই নম্বরটি বিজেপিকে ব্যবহার করতে দেয় ওই সংস্থাটি এবং গত দু’বছর ধরে ওই নম্বরটি কসমিক অন্য কোনও ভাবে ব্যবহার করেনি। এটা কসমিক ইনফর্মেশন অ্যান্ড টেকনলজি লিমিটেড আমাদের নিশ্চিত করেছে। বিপরীত ভাবে এই নম্বরটি নিয়ে অন্য কোনও দাবি উঠলে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিকর।’’
দুটি সংস্থার মধ্যে চালাচালি হওয়া চিঠি। নিজস্ব চিত্র
গত কাল দেশজোড়া বিতর্কের মাঝে পড়েও বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলেছিল বিজেপি। কিন্তু, সেই স্বর ততটা জোরাল ছিল না। এ দিন এই দুটি এই দুটি চিঠিকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের তীব্র ভাবে বিদ্ধ করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির স্পষ্ট ভাবেই বলছে, বিরোধীদের ‘নোংরা খেলা’ প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গতকাল সিএএ নিয়ে সমর্থন চেয়ে অমিত শাহ টুইটারে একটি নম্বর শেয়ার করার পর। অমিত জানান, ওই নম্বরে মিসড কল দিলেই এই আইনের পক্ষে সমর্থন নথিভুক্ত হবে। বিজেপির তরফেও ওই নম্বর প্রচার করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ভিন্ন ছবি উঠে আসে। দেখা যায় সেই একই নম্বর থেকে একাকিত্ব কাটাতে বন্ধুত্ব-যৌনতার হাতছানি, নিখরচায় বিনোদন অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন, এমনকি চাকরির প্রস্তাব দিয়ে ওই নম্বরে ফোন করতে বলা হচ্ছে। আর এ নিয়ে টুইটারেই অনেকে অভিযোগ করেন, ভুয়ো পরিচয়ে সিএএ-র পক্ষে বিপুল সমর্থন জোগাড় করতেই এমন কৌশল নিয়েছে বিজেপির আইটি সেল।