প্রতিবাদীদের হাতে দেখা গেছে ফৈয়জের কবিতা লেখা পোস্টার। ছবি সংগৃহীত।
ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জের ‘হম দেখেঙ্গে’ ঘিরে বিতর্ককে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং হাস্যকর বলে আখ্যা দিলেন তাঁর মেয়ে সলীমা হাশমি। সম্প্রতি কানপুর আইআইটি-র তদন্ত কমিটির কাঠগড়ায় উঠেছে কিংবদন্তি কবির এই উর্দু ‘নজম’। ওই কমিটিই খতিয়ে দেখবে, ফৈয়জের ওই নজম বা গীতিকবিতাটি হিন্দু-বিরোধী কি না! গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সলীমার মতোই একে হাস্যকর বলেছেন জাভেদ আখতার, রাহত ইন্দোরি, বিশাল ভরদ্বাজের মতো বিশিষ্টরাও।
ফৈয়জের বড় মেয়ে সলীমার মতে, গোটা বিষয়টি একই সঙ্গে দুঃখজনক এবং হাস্যকর। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারতেন না, ফৈয়জের কবিতা তাঁদের কণ্ঠস্বরকে বলীয়ান করেছে।’’ তাঁর মতে, রাষ্ট্রশক্তির নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের কণ্ঠ জুগিয়েছে তাঁর বাবার কবিতা। ফৈয়জের ‘হম দেখেঙ্গে’-কে হিন্দু-বিরোধী বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ সলীমা। তাঁর কথায়, ‘‘ ‘হম দেখেঙ্গে’-কে কাঠগড়ায় তোলাটাই হাস্যকর, শুধুমাত্র এই জন্য যে, কয়েক জন পড়ুয়া নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সময় এটি গেয়েছেন।’’
গত ১৭ নভেম্বর দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান কানপুর আইআইটি-র পড়ুয়ারা। সেই প্রতিবাদ বিক্ষোভে পড়ুয়াদের কণ্ঠে শোনা যায় ফৈয়জের এই গীতিকবিতাটি। এর আগে জামিয়াতেও শোনা গিয়েছিল তা। তবে কানপুর আইআইটি-তে এই গানের পর সেখানকার শিক্ষক বশীমন্ত শর্মার অভিযোগ, ফৈয়জের এই নজমটি হিন্দু-বিরোধী। ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটিও। তবে এই অভিযোগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে অনেকেই জানান, ১৯৭৯ সালে লেখা এই নজমটি আসলে তৎকালীন পাক একনায়ক জিয়া-উল-হকের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ। ওই নজমের মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্র-বিরোধী বার্তাই দিয়েছিলেন ফৈয়জ। সলীমা বলেন, ‘‘ফৈয়জের কবিতা যখন লেখা হয়েছিল, তখনও তা প্রাসঙ্গিক ছিল। এবং এখনও এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যদিও ওই কবিতা কখনই হিন্দু বা মুসলিম-বিরোধী ছিল না।’’
আরও পড়ুন: হিন্দু-বিরোধী? কাঠগড়ায় ফৈয়জের ‘হম দেখেঙ্গে’
সলীমার মতোই এ নিয়ে সরব হয়েছেন বলিউড চিত্রনাট্যকার তথা কবি জাভেদ আখতার। তিনি বলেন, ‘‘ফৈয়জের ওই কবিতা লেখা হয়েছিল জিয়া-উল-হকের মতো একনায়ক তথা মৌলবাদীর বিরুদ্ধে। এটা লক্ষণীয় যে সব মৌলবাদীরাই এই কবিতা অপছন্দ করেন।’’ জাভেদের মতোই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ। তাঁর কথায়, ‘‘এটা পুরোপুরি হাস্যকর। কবিতাকে বুঝতে গেলে তা প্রথমে অনুভব করতে হবে। এবং তার জন্য একটু বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন। মনে হচ্ছে, সেটা যেন সে সব মানুষজনের মধ্যে একেবারেই নেই, যাঁরা কবিতাটি হিন্দু-বিরোধী এবং মুসলিমদের পক্ষে বলে বোঝাচ্ছেন।’’
আরও পড়ুন: ভারতে পুলিশি ‘অত্যাচার’ দেখাতে বাংলাদেশি ছবি, ট্রোলড ইমরান