Pinarayi Vijayan

Pinarayi Vijayan: বাড়ছে বিজয়ন-বন্দনার চল, বিতর্ক সিপিএমে

নবতম বিতর্কের কেন্দ্রে যে অনুষ্ঠান, তার নাম ‘তিরুভাতিরাকলি’! মালয়ালম সংস্কৃতিতে যা এক ধরনের সমবেত নৃত্য ও গীতি আলেখ্য।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:২১
Share:

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। —ফাইল চিত্র।

বিধানসভা ভোটের সময়ে গত বছর রাজ্যের নানা প্রান্তে দেখা গিয়েছিল তাঁর ছবির নীচে ‘ক্যাপ্টেন’ লেখা পোস্টার ও ফ্লেক্স। এ বার দলীয় সম্মেলন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান চলছে তাঁপ জয়স্তুতি করে! কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি কি দলকে ছাপিয়ে উঠতে চাইছে? বিতর্ক বেধেছে বাম রাজনীতিতে।

Advertisement

নবতম বিতর্কের কেন্দ্রে যে অনুষ্ঠান, তার নাম ‘তিরুভাতিরাকলি’! মালয়ালম সংস্কৃতিতে যা এক ধরনের সমবেত নৃত্য ও গীতি আলেখ্য। কেরলে সিপিএমের বিভিন্ন জেলা সম্মেলন উপলক্ষে এই ‘তিরুভাতিরা’র অনুষ্ঠান আয়োজন শুরু হয়েছিল। নাচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন দলের মহিলা সমিতির সদস্যেরা। কোভিড-বিধির কড়াকড়িতে আপাতত এমন অনুষ্ঠান বন্ধ। তবে অন্য বিতর্ক ভরপুর জারি আছে! যে গানকে ঘিরে ‘তিরুভাতিরা’ চলছিল, সেখানে বিজয়নের হাত ধরে কেরলের প্রভূত উন্নয়ন এবং বিপন্ন মানুষের পীড়া মুক্তির কথা ফলাও করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেকেরই মতে, এমন রচনা ব্যক্তিপুজোরই নামান্তর। সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, অন্যান্য দলে বা সংগঠনে এ সব আকছার চলে। কিন্তু এক জন ব্যক্তিকে ঘিরে এমন উচ্ছ্বাস দেখানো কি আদৌ বাম রাজনীতির রেওয়াজ?

বর্ষীয়ান বাম নেতাদের কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কেরলের এলডিএফ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে প্রবল জনপ্রিয় ছিলেন ভি এস অচ্যুতানন্দন। বহু জায়গাতেই তাঁর নামে, তাঁর বন্দনায় পোস্টার থাকত, যেখানে দলের নাম বা চিহ্ন থাকত না। তখন কেরলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন এই ‘ব্যক্তিবন্দনা’র সংস্কৃতিতে না মজার বার্তা দিয়েছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকদের। এমনকি, বাংলাতেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন যখন পালন করতেন সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তী ও তাঁর সঙ্গীরা, তৎকালীন শ্রমিক নেতা এম কে পান্ধে তখন দলের অন্দরে মন্তব্য করেছিলেন ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা’ কী ভাবে মাথা চাড়া দিচ্ছে বঙ্গের বাম শিবিরে? জ্যোতিবাবু নিজে এবং সিপিএমের তখনকার নেতৃত্ব ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, সুভাষ-রমলা চক্রবর্তী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় যা করছেন, তা একেবারেই তাঁদে ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। এ বার কেরলে ‘তিরুভাতিরা’য় দলের ছাপ অস্বীকার করার জায়গা নেই বলে বিতর্কও আরও তীব্র।

Advertisement

বিজয়ন-বন্দনার যে অনুষ্ঠানের জেরে বিতর্ক আরও জোরালো মাত্রা পেয়েছে, তা হয়েছিল সিপিএমের তিরুঅনন্তপুরমের জেলা সম্মেলনে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলের ৫০২ জন মহিলা কর্মী ‘তিরুভাতিরা’ পরিবেশন করেছিলেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের পলিটবুরো সদস্য এম এ বেবি এবং জেলা নেতৃত্ব। আরও কিছু জেলাতেও আঞ্চলিক কমিটিগুলির সম্মেলনে একই ধরনের অনুষ্ঠান হয়েছে। তবে তিরুঅন্তপুরমের অনুষ্ঠানই ছিল কলেবরে সব চেয়ে বড়। তার পরেই রাজ্যের বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তোলেন, কোভিড সংক্রমণের জেরে জমায়েতে যখন বিধিনিষেধ রয়েছে, তার মধ্যে এমন অনুষ্ঠান কী ভাবে হয়? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন, এই সময়ে এমন অনুষ্ঠান করা ঠিক হয়নি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবনকুট্টি প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে সে সবই কোভিড-বিধি লঙ্ঘনের কারণে।

ব্যক্তির জয়গান যে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বুঝিয়ে দিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘পিনারাইয়ের নেতৃত্বে বিগত এলডিএফ সরকার ভাল কাজ করেছিল বলেই কেরলের মানুষ ফের তাদের ক্ষমতায় এনেছে, এটা অনস্বীকার্য। তবে এমন বেনজির সাফল্যের পিছনে দল ও ফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকদের পরিশ্রমও ভোলার নয়। বিষয়টা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠলে বামপন্থী রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সেটা ঠিক খাপ খায় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement