ফাইল চিত্র।
১৫-১৮ বছর বয়সিদের টিকাকরণের শুরুর দিনেই বিতর্ক!
আজ শুরু হয়েছে ওই টিকাকরণ। কিশোর-কিশোরীদের একমাত্র টিকা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারত বায়োটেক সংস্থার কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক। ওই প্রতিষেধকের ভায়ালে ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময়সীমা (এক্সপায়ারি ডেট) পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও একাধিক স্থানে তা থেকে ছোটদের টিকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৫ অক্টোবর, সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন (সিডিএসসিও) কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের ‘শেল্ফ লাইফ’ বা ব্যবহারের সময়সীমা আরও তিন মাস করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে একটি কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের ব্যবহারের মেয়াদ ৯ থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস এবং কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের মেয়াদ ৬ মাস থেকে বেড়ে ৯ মাস হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওই দুই প্রতিষেধকের ব্যবহারের সময় তিন মাস বাড়ালেও প্রতিষেধকের গুণমান বা কার্যক্ষমতায় তারতম্য হয় না। কেন্দ্রের ওই যুক্তি অবশ্য আশ্বস্ত করতে পারেনি উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েদের। অনেক অভিভাবক তারিখ পেরিয়ে যাওয়া প্রতিষেধক সন্তানদের দিতে চাননি।
যদিও দিনের শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে ১৫-১৮ বছরের অন্তত ৪১ লক্ষ কিশোর-কিশোরী আজ টিকা নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া টুইট করে জানিয়েছেন, যাঁরা এখনও টিকা নেননি, তাঁরা যেন দ্রুত টিকা নিয়ে নেন।
উদ্বিগ্ন এক মায়ের টুইট থেকে আজ বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সকালে টুইট করে তিনি জানান, আজ তাঁর সন্তানকে প্রতিষেধক দেওয়ার ঠিক আগে তিনি দেখেন, ভায়ালের লেখা অনুযায়ী, ওই প্রতিষেধকের মেয়াদ নভেম্বরে শেষ হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশ্ন করলে তাঁরা একটি কাগজ দেখিয়ে জানান, সরকার কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের মেয়াদ তিন মাস করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্বিগ্ন ওই মায়ের দাবি, কী ভাবে, কেন ও কিসের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করুক কেন্দ্র। তাঁর মতে, কেবলমাত্র মজুত করা প্রতিষেধক শেষ করার জন্যই ছোটদের বেছে নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেসও। দলের প্রশ্ন, কোন গবেষণার ভিত্তিতে ওই প্রতিষেধকের মেয়াদ বাড়ানো হল, তা জানাক কেন্দ্র। গবেষক ও বায়োএথিক্স বিশেষজ্ঞ অনন্ত ভানও বলছেন, ‘‘বিষয়টি বাবা-মায়েদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেবে। সরকারের উচিত ব্যাখ্যা দেওয়া।’’
গোড়া থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কোভ্যাক্সিন। মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তিনটি পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই এ দেশে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের প্রশ্নে ওই প্রতিষেধককে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্র ছাড় দিলেও, যথেষ্ট তথ্যের অভাবে তা আটকে যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র স্বীকৃতিপ্রাপ্তির বৈঠকে। পরবর্তী সময়ে ভারত বায়োটেক দফায় দফায় তথ্য পেশ করলে তবে ওই প্রতিষেধককে স্বীকৃতি দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।